**ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতেও থেমে নেই প্রতিবাদ: নৃত্যের তালে তালে সনাতন সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ**
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গভীর রাতে এক ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের সাক্ষী হয় দেশ। সম্প্রতি দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস আক্রমণের প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে অংশ নেন হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ। মিছিলের স্লোগানগুলো ছিল বেশ অনন্য—“তুমি কে, আমি কে — সনাতনী সনাতনী” এবং “আমাকে ভারত যেতে বলার তুই কে?”, যা প্রতিবাদের আবেগময় পরিবেশ তৈরি করে। বিক্ষোভকারীরা নৃত্যের তালে তালে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন, যা আন্দোলনে ভিন্নধর্মী মাত্রা যোগ করে।
### সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতি ও মন্দিরে হামলার ঘটনা বেড়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ৫২টি জেলার ২০০টিরও বেশি আক্রমণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এতে অনেক সংখ্যালঘু পরিবার নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে, এবং অনেকে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের মতে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
### ড. ইউনূসের প্রতিশ্রুতি ও প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়া
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাম্প্রতিক সহিংসতাকে “জঘন্য” আখ্যা দিয়ে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেন এবং জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কিন্তু আন্দোলনকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই মনে করছেন এই প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়। তাঁদের মতে, সরকারকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করতে হবে।
### বিক্ষোভের মূল দাবি
বিক্ষোভকারীরা সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন এবং জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য আসন সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, শুধু আশ্বাস নয় বরং সরকারকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিবাদে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে তাঁরা সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য মেনে নেবেন না এবং প্রয়োজন হলে তাঁরা আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হবেন।
### পরিশেষে
গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই বিক্ষোভ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ যখন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন তাঁদের দাবি ও আন্দোলন দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।