বেলা শেষে: পর্ব -৩

 


#বেলা_শেষ। [১৭]


আরাভকে এম.ডি স্যারের চেয়ারে দেখে খানিকটা অবাক হয় ভূমিকা। হয়তো সে আরাভকে এখানে আশা করেনি। ভূমিকা যতদুর জানে আরাভ ওদের কলেজের ভি.পি। কিন্ত ও একটা কোম্পানির এম.ডি এটা অজানা ছিলো। ভূমিকা অবাকের সুরে জিগ্যেসু করে,


-মিস্টার আরাভ, আপনি?? আরাভ এতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো ভূমিকার অক্ষির দিকে। ভূমিকার কথা কর্ণপাত হতে সামনে তাকালো সে, অতঃপর ভ্রু ভ্রু নাড়িয়ে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকালো সে?? ভূমিকা পুরো কেবিনটায় অবলোকন করে নিলো। হঠাৎ একটা ছবিতে তার আঁখিদ্বয় আটকে যায়। আরাভের হাসিমাখা ছবি। তার সাথে রয়েছে একটা বয়স্ক লোক। বয়স সত্তর হবে তার। দুজন দু-জনের দিকে তাকিয়ে আছে ছবিটায়। ভূমিকা বুঝতে পাড়ছে না আরাভের ছবি এখানে কেন?? ভূমিকা জিগ্যেসু দৃষ্টিতে আরাভের দিকে তাকালো। আরাভ হয়তো ভূমিকার অবস্থা বুঝতে পাড়ছে। তাই সে নিজের ভাবনা ভূলে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। অতঃপর বলল,


-মিছ ভূ,,, উহঃ সরি, মিসেস। মিসেস ভূমিকা, প্লিজ সিট ডাউন। হাতের ইশারায় চেয়ার দেখিয়ে বলল আরাভ। ভূমিকা আরাভের দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে, আরাভের ইশারা লক্ষ করে সিট গ্রহন করলো সে। অতঃপর আরাভ বলল, 


-এতটা অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমিই এম.ডি। আপানার কাগজপত্র গুলো দেখান?? তারপর ভূমিকা ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে সেগুলো আরাভের হাতে দিলো। আরাভ কাগজপত্র গুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো,


-আপনি তো দেখছি টপার। ভূমিকা হাসার চেষ্টা করলো কিন্ত পারলো না। আধো তার চাকরি হবে কি হবে না সেটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে। আরাভ কাগজপত্র ফাইলে ডুকিয়ে এক পাশে রেখে দিলো। তারপর কিছুক্ষণ মৌনতা থেকে বলল,


-আমি যতদূর জানি দিগন্ত উচ্চবংশীয় ছেলে। আর সেই দিগন্তের ওয়াইফ হয়ে আপনি আসছেন চাকরি করতে। কেন মিছ, সরি মিসেস। আপনার কি মনে হয়না এতে দিগন্তের পরিবারের অসম্মান করা হবে। আরাভের কথা শুনে চোখমুখ শক্তহয়ে এলো ভূমিকার। শক্তগলায় বলল,


-চাকরি করলে পরিবারের অসম্মান হয় এটা আপনাকে কে বলল? তাছাড়া আমার চাকরি করার সাথে দিগন্তের পরিবারের কি সম্পর্ক। আমি চাকরি খুজছি নিজের জন্যে। করো উপর নির্ভরশীল হওয়ার থেকে নিজে উপার্জন করাটা বোধহয় বেশী সম্মানজনক। ভূমিকার কথা শুনে ছোটছোট চোখ করে ফেলল আরাভ। ভূমিকা যে এমন কিছু বলবে সেটা সে আগে থেকেই জানতো। অতঃপর আরাভের চাওনি দেখে ভূমিকা কাটকাট গলায় বলে উঠলো,


-আপনি যদি আমাকে চাকরি দিতে না পাড়েন তাহলে সোজাসাপ্টা বলুন।


-আমি কি আপনাকে বলেছি চাকরি দিবো না। এত বেশী বকেন না আপনি??  


আমি তো শুধু জানতে চাইছিলাম আপনার কিসের এতো প্রবলেম। নয়না আমাকে আপনার প্রবলেমের কথা বলেছে। কিন্ত কি প্রবলেম সেটা বলেনি। আমি জানতে চাই ভূমি। আপনার অসহায় মুখটা যে আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয়না। বড্ড যন্তণা দেয় আমাকে। কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করলেও মুখে প্রকাশ করলো না আরাভ। বড় করে শ্বাস ফেলল আরাভ। তারপর বলল, 


-কবে জয়েন করছেন?? আরাভের কথা শুনে ভূমিকার অধরে হাসি ফুটে উঠলো। উৎফুল্ল হয়ে বলল, আজ তো এসেই পড়েছি। কলেজটাও মিছ গেলো। তাহলে আজ থেকেই জয়েন করে।


-এস ইউর ওয়িশ। উঠে দাঁড়িয়ে বলল আরাভ। ভূমিকাও উঠে দাঁড়ালো।ফাইলটা ব্যাগে পুরে ব্যাগ কাঁদে ঝুলিয়ে নিলো। আরাভ টেবিলের উপর থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে সেটা পকেটে রাখলো। হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সামনে পা বাড়ালো।আর ভূমিকাকে বলল,


-কাম উয়িথ মি। ভূমিকা আরাভের পিছু পিছু চলল। 


আরাভ ভূমিকাকে নিয়ে ম্যানেজারের কেবিনে নিয়ে আসলো। মুলত সে ভূমিকাকে ম্যানেজারের এসিস্ট্যান্ড হিসাবে রেখেছে। ম্যানেজার ঢের মনোযোগ দিয়ে তার কাজ করছিলেন। আরাভের দিকে নজর দেওয়ার টাইম নাই তার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করতে হবে তাকে। আরাভ পকেটে হাত গুজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ম্যানেজারকে পরখ করে নিলো। তারপর বিরবির করে বলল,


-যার কাজে এত মনোযোগ তার হিসাবে এত গোলমাল হয় কেমনে?? আরাভের ভাবনার ছেদ ঘটে ভূমিকার কথায়,


-স্যার, আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?? আর ওনি তো ম্যানেজার তাইনা।


আরাভ ভূমিকার কথার কোন জবাব দিলো না। সে ম্যানেজারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অতঃপর ম্যানেজার কে বলল,


-কাকা আপনা আর কিছু করতে হবে না। আমি আপনার এসিস্ট্যান্ড নিয়ে আসছি। এখন থেকে আপনার কাজগুলো ওনি করবে।


আরাভের কথা শুনে ভূমিকার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। ম্যানেজার ও পারসোনাল এসিস্ট্যান্ড থাকে সেটা আগে জানতো না সে। ভূমিকা কিছু বলবে তার আগেই আরাভ বলে উঠলো,


-কোন কথা নয়। আপনি ম্যানেজার কাকার পারসোনাল এসিস্ট্যান্ড হিসাবে কাজ করবেন। কথাটা বলেই শিটি বাজাতে বাজাতে বেড়িয়ে যায় আরাভ। আরাভ চলে যাওয়ার পর ভূমিকা ম্যানেজারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,


-এই যে দাদু, এগুলো আমাকে দিন আমি করে দিচ্ছো।


-এই মাইয়া এই। আমাকে কোন দিক থেকে দাদু মনে হয় তোমার হুম। আমার কি চুল দাঁড়ি পেকেছে??


-দাঁড়ি থাকলে তো পাকবে?? বিরবির করে বলল ভূমিকা।


-এই মাইয়া শুনো, জ্বি বলুন, তুমি এগুলো করতে পারবে?? না মানে বলছিলাম। তুমি যদি এখন এই কাজগুলো করো তাহলে আমি একটু আমার বউয়ের সাথে দেখা করতে যেতাম।


ভূমিকার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। এই লোকটা এই বয়সে এসেও বউয়ের জন্যে কেমন দেওয়ানা। আসলে স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কটাই এরকম, যতদিন যাবে সম্পর্কটা আরো মজবুত হবে।


আরাভ দাঁড়িয়ে আছে দিগন্তের ফ্ল্যাটের সামনে। নওশাদের কাছ থেকে দিগন্তের বাসার ঠিকানা নিয়ে এখানে এসেছে সে। আরাভ যখনি বুঝতে পারছে ভূমিকা তাকে কিছুতেই সত্যিটা বলবে না। তখনি সে সিদ্ধান্ত নেয় ভূমিকাকে ফোর্স না দিগন্তের কাছ থেকে সবটা শুনবে। আরাভের বিশ্বাস দিগন্ত তাকে সত্যিটা বলবেই। পর পর দু-বার বেল বাজানোর পর দিগন্ত এসে দরজা খুলে দিলো। দরজার ওপাশে আরাভকে দেখে প্রাণউচ্ছল হাসি হাসলো দিগন্ত। অতঃপর দুজনেই রুমে প্রবেশ করে।


ড্রয়িংরুমে সুফাতে মুখোমুখি বসে আছে দিগন্ত আরাভ। দু-জনের মধ্যেই বিরাজ করছে পিনপতন নিরবতা। আরাভ এই নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো,


-মিমির সাথে যদি সারাজিবন কাটাতে চাও তাহলে সেদিন তোমার বাবাকে সত্যিটা বলোনি কেন? কেন ভূমিকার জিবনটা নষ্ট করলে। আরাভের এই প্রশ্নে দিগন্ত জবাব ছিলো এরকম, আমি নয় ভূমি নিজে নিজের জিবন নষ্ট করেছে। আর যদি কেও ওর জিবন নষ্ট করার জন্যে দায়ি থাকে তাহলে সেটা আমার আব্বা আমি নয়। কারন সেদিন বিয়েটা ভূমিকা ভেঙে দিয়েছিলো। যার কারনে আব্বা আমার সাথে জোর করে ওর বিয়ে দেয়।


-বিয়েতো যৌতুকের কারনে ভেঙেছে। এতে ভূমিকার দোষটা কোথায়??এতক্ষণ দিগন্ত ওদের বিয়ের শুরু থেকে সবটা বলেছে। এমনকি মিমির সাথে সম্পর্কের কথাও বলেছে আরাভকে।


-হ্যাঁ এটাও ঠিক। তবে ভূমিকার জিবন নষ্ট হওয়ার জন্যে ও নিজে দায়ী। ওর ওই চঞ্চলতা, প্রতিবাধি শক্তিই দায়ি। আমি নয়। দিগন্তের এই কথাটা শুনে আরাভের ইচ্ছে করছে ওর গালে পরপর কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতে। ভূমিকার মতো মেয়েকে অবহেলা করছে। আজকাল এমন মেয়ে কজন পাওয়া যায়। আর ও পেয়ে তাকে অবহেলায় হারাচ্ছে। তবুও যতটা সম্বভ নিজকে সংযত রাখলো। দিগন্তকে বুঝানোর জন্যে আবারও বলে উঠলো,


-দেখ দিগন্ত যা হয়েছে সেটা ভূলে যাও। ভূমিকা তোমার ওয়াইফ। এই পবিত্র সম্পর্ককে তুমি অস্বীকার করতে পারো না। তোমার উচিৎ,,,,


-ইটজ্যকলি, আরাভকে থামিয়ে বলে উঠলো দিগন্ত। বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। এই সম্পর্ক আমি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারবো না। আপনি জানেন আমি আর মিমি আইনগত ভাবে স্বামি স্ত্রী। দু-বছর আগে আমার রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছি। এখন শুধু ইসলামিক আর পরিবারগত ভাবে এই বিয়ের সম্মতি দেওয়ার পালা। সেই সম্পর্ক কি করে অস্বীকার করবো বলতে পারেন । তারপর দিগন্ত উঠে গিয়ে ওর রুম থেকে একটা কাগজ নিয়ে আসলো। আর সেটা আরাভের হাতে দিয়ে বলল,


-এই দেখুন আমাদের রেজিস্ট্রি পেপার। দিগন্তের কথা শুনে আরাভ যেন শকড্ এর উপর শকড্। সে কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো। সত্যিই এটা ওর আর মিমির বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার। তারমানে দিগন্ত মিমি বিবাহিত। এবার আরাভের পচন্ড রাগ হলো। একটা বিয়ে করা সত্তেও আরেকটা বিয়ে কেন করলো। কেন সে সেদিন তার বাবাকে সত্যিটা বলে নি। আরাভ দু-হাত শক্ত মুঠি করে নিলো। রক্তচক্ষু করে দিগন্তের দিকে তাকালো। তাতেও দিগন্ত কোন ভাবান্তর হচ্ছে না। আরাব বুঝতে পারছে এই কি সেই দিগন্ত। আগে এই দিগন্তকে নিয়ে আরাভে গর্ব হতো। আরাভ উঠে দাঁড়ালো। তারপর বলল,


-ডিভোর্স তা কবে দিচ্ছো?? 


-এক্সাম শেষ হলেই। তাছাড়া বিয়েটা যখন পারিবারিক ভাবেই হয়েছে। ডিভোর্সটাও সেখান থেকে হবে।


দিগন্তের কথা শুনে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলো না আরাভ। ক্রোধান্বিত হয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। আরাভ চলে আসতেই দিগন্ত দু-হাতে মাথা চেপে ধরলো। আর মিনমিনিয়ে বলল, কেন এমন দু-টানায় ফেললে আমাকে।


অফিসের ভিতরে হট্টগোল শুরু করে দিয়েছে ম্যানেজার। এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারী করে যাচ্ছে আর বিরবির করে আরাভকে বকে যাচ্ছে। রাকিব ম্যানেজারের মাথার উপরে আইসব্যাগ ধরে রেখেছে। ম্যানেজারের নাকি পেসার হাই। তখন স্ট্রক করে বলাতো যায়না। তাই রাকিব আছে ম্যানেজারের সেবায়। নয়না সহ অফিসে বাকি স্টাফগুলো ম্যানেজারের কান্ড দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কারন ম্যানেজার আগে কখনো রাগেনি। ভূমিকা নয়নার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। প্রথম দিনেই তার কারনে অফিসে এমন হোলস্থুল কান্ড হবে এটা তার ধারনার বাইরে ছিলো। আর এই ম্যানেজারটাও একদিনেই ভূমিকাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে। সারাক্ষণ শুধু বউয়ের গল্পে। কিছুক্ষণ পর একরাশ মন কাখাপ নিয়ে অফিসে প্রবেশ করলো আরাভ। ছোট ছোট পা ফেলে পকেটে দুহাত পুরে মাথা নিচু করে হাটছে সে। আরাভকে দেখেই ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে আরাভের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অতঃপর বলল,


-এই যে বাবা আরাভ, এমন একটা কর্কশ মেয়েকে আমার সাথেই কেন দিলে। অফিসে তো আরো অনেক স্টাফ আছে তাদের সাথে দিতে পারো নি। জানো, এই মেয়েটা কত বড় ঠেঁটা, আমাকে বলে আমি নাকি টুকে টুকে পাশ করেছি।


-ম্যানেজারের কোন কথায় আরাভের কান পর্যন্ত পৌছালো না। সে প্রেমপরায়ণ দৃষ্টিতে ভূমিকার মুখ মণ্ডলের দিকে তাকালো। ভূমিকা তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো।


[বিঃদ্রঃ- পুরো গল্পটা না পড়ে কেও বাজে কমেন্ট করবেন না। আসসালামু আলাইকুম ]

#বেলা_শেষে। [১৮]


-আমি আপনাকে যতই দেখছি তত বেশী অবাক হচ্ছি মিসেস ভূমিকা তালুকদার। আপনার সাথে এত অন্যায় হয়েছে তবুও সবটা সহ্য করে হাসি মুখে সবার সাথে মেলামেশা করছেন। কি অদ্ভুত আপনি। আপনাকে দেখলে কেও বুঝতেই পারবে না আপনার মনের ভেতরও চাপা কষ্টা আছে। আজ দিগন্ত না বললে আমি হয়তো সত্যিটা কখনো জানতে পারতাম না। জানেন আমার খুব করে ইচ্ছে করে আপনার সমস্ত কষ্ট দূর করে দিতে। আপনাকে হাসি খুশি এক প্রনবন্ত জিবন দিতে। সেখানে কোন দুঃখ থাকবে না কষ্ট থাকবে না। থাকবে শুধু আনন্দ উল্লাস আর ভালোবাসা। আপনার প্রতিটা হাসির কারন হতে চাই আমি। কিন্তু সেই অধীকার আপনি আমাকে কখনো দিবেন না। আপনার মন জুরে তো বিরাজ করছে দিগন্ত। কারন আপনি যে ওর ওয়াইফ। আপনি আমার মনে ভালোবাসার জাগরণ ঘটিয়েছন। কিন্ত আপনার মনে আমার জন্যে কোন ভালোবাসাই নেই। এই #বেলা_শেষে না আসলেও পারতেন আমার জিবনে। আচ্ছা এদেশে কি এলএলবি পড়ার জন্যে আর কোন ইউনির্ভাসিটি ছিলো না। কেন আপনাকে আমার শহরে আসতে হলো। ভূমিকার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলল আরাভ। 


-এই যে বাবা আরাভ, তোমার আবার কি হইলো। কিছু বলছো না যে। ম্যানেজারের কথায় ঘোর কাটলো আরাভের। তারপর বলল,


-জ্বি চাচা বলুন!!!


-এই ভর দুপুরে তুমি আবার কই হাড়াইলা। এই মাইয়ার বিচার করো। কত্তবড় সাহস এর জানো। আমাকে বলে আমি নাকি টুকলি করে ক্লাস পাড় করেছি। আর না হয় আমি স্যারের মেয়েকে ডিস্টার্ব করতাম তাই স্যাররা আমাকে বেশী বেশী নাম্বার দিয়েছে যাতে আমি তাড়াতাড়ি স্কুল কজেল থেকে চলে আসি। ম্যানেজার রাগান্বিত হয়ে কথাগুলো বললেও, ওনার কথা শুনে সকল স্টাফ হেসে দিলো। এমনকি আরাভ নিজেও। সে ভূমিকার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠলো,


-এইবার ম্যানেজার কাকা পরেছে সঠিক মানুষের হাতে। আপনি পারেনও বটে। যাই হোক আমার এবার শান্তি মিলবে। কিন্ত আপনার শান্তি মিলবে কোথায়??


-মিসেস ভূমি ভুল কি বলেছে।আপনি সব হিসাবেই গোলমাল করেন। রাকিক কথাগুলো বলে ম্যানেজারের দিকে তাকাতেই দেখে ম্যানেজার তার দিকে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে আছে। ম্যানেজারের এমন চাহনি দেখে রাকিব শুকনো ডুকগিলে আমতা আমতা করে বলল,


-আ-আমার অনেক কাজ পরে আছে আমি যাচ্ছি। রাকিব চলে গেলো। তারপর একে একে সবাই যার যার কাজে চলে যায়। আরাভ ভূমিকার দিকে একপলক তাকিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। ম্যানেজার ভূমিকাকে শাসিয়ে বলে,


-তোমাকে আমি দেখে নিবো। বিনিময়ে ভূমিকা ভুবন ভুলানো হাসি উপহার দিলো। এটা দেখে ম্যানেজার রাগে ঘটঘট করতে করতে চলে যায়। 


নদীর স্রোতের মতো প্রবাহমান সময় বয়ে চলেছে প্রতিমুহূর্তে। কারো জন্য সে থেমে থাকেনা। জীবনে সাফল্যের মূলমন্ত্রই হল সময়ের সঠিক ব্যবহার।মহামূল্য সময়কে যে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে জানে,সেই পারে সাফল্য অর্জন করে নিতে। আর যে সঠিক ব্যবহার করতে জানে না তার জিবনে নেমে আসে চরম দুঃখ। ভূমিকার মাঝে মাঝে মনে হয় সে যদি আবার সেই ছেলেবেলা ফিরে পেত তাহলে নিজের জিবনটাকে সঠিক ভাবে গুছিয়ে নিতে পারতো। কেমন জানি ছন্নছাড়া হয়ে গেছে তার জিবন। প্রতি মুহূর্তে যন্ত্রনায় ভুগছে সে। কিন্ত সেটা কাওকেই বুঝতে দিচ্ছে না।

কেটে গেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক। এর মধ্যে অবশ্য দিগন্ত একবার ভূমিকার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু ভূমিকা পাত্তা দেয়নি। ভূমিকার এখন কলেজে যাওয়া হয়ে উঠে না। নিতু ক্লাস করে আর ভূমিকা ওর কাছ থেকে সব নোটস নিয়ে পড়ে। এখং বেশীর ভাগ সময় তার অফিসেই কাটাতে হয়। সারাদিন ম্যানেজারকে খেপানো আর টুকটাক কাজ করা হয়। ভূমিকা যখন ম্যানেজারকে খেপায় আর ম্যানেজার রেগে ভুত হয়ে যায় কিন্ত ভূমিকাকে কিছু বলতে পারে না। এই দৃশ্য দেখে নিজের কেবিনে বসে অধরোষ্ঠ চেপে হাসে আরাভ। আরাভে কেবিনের চারিদিকে ওয়ান সাইড মিরর হওয়াতে সে সেখান থেকে সবকিছু দেখতে পায়। কাজের ফাঁকে ভূমিকাকে দেখা, কফির মগে চুমুক দেওয়ার সময় আড় চোখে ভূমিকার দিকে তাকানো আরাভের এখন একটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে। দিগন্তের এক্সাম চলছে। সে এখন তার এক্সাম নিয়ে ব্যস্ত।মিমিও এখন তাকে তেমন ডিস্টার্ব করে না। এই এক্সাম শেষ হলেই তো সে দিগন্তকে কাছে পাবে। ইসলামিক নিয়ম মেনে তারা আবার বিয়ে করবে এক সাথে সংসার করবে।ভাবতেই লাজ্জায় লাল হয়ে যায় মিমির মুখশ্রী।


ভূমিকা মন দিয়ে কাজ করছিলো আর ম্যানেজার রাগে ফুসফুস করছে। ব্ল্যাক মাম্বা সাপের ন্যায় রাগ হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে এখনি ছোবল মেরে দিতে। কিছুক্ষণ আগে ম্যানেজার কাকা একটা হিসেব করতে বসছিলো। লাষ্ট মোমেন্ট এ গিয়ে সেটাও গুলিয়ে ফেলে। তাই ভূমিকা ওনাকে বলে, এই যে টুকে পাশ করা ম্যানেজার আপনার দ্বারা এসব হবে না আপনি সরুন আমি করে দিচ্ছি। ম্যানেজার তো রেগে একাকার। কিন্ত ভূমিকা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মন দেয়। কিছুক্ষণ পর আরাভ আসে এখানে আর ম্যানেজার কে উদ্দেশ্য করে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,


-ম্যানেজার কাকা, লাষ্ট প্রজেক্টে আমাদের কোম্পানি কত টাকা লস করেছে।


ম্যানেজার আমতা আমতা করে বলে,

-সেটা তো জানিনা বাবাজি।


-আপনি বলতে পারবেন মিসেস ভূমিকা। [আরাভ]


-টুয়েন্টি সেভেল লাক স্যার। [ভূমিকা]


-আরাভ গিয়ে ভূমিকার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো। আর বলল, কালকের প্রজেক্টের ফাইলটা একটু দেখান প্লিজ। জ্বি স্যার। ভূমিকা একটা ফাইল বের করে আরাভকে সব হিসেব বুঝিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আরাভ সেদিকে না তাকিয়ে তাকিয়ে আছে ভূমিকার মুখের দিকে। আরাভের অধরোষ্ঠে ঝুলানো এক মুগ্ধকর হাসি। 


পরেরদিন মিটিংরুমে ম্যানেজারকে না নিয়ে ভূমিকাকে নিয়ে যায় আরাভ। ম্যানেজার বুঝতে পারছে ভূমিকার কারনে তার জায়গা চলে যাচ্ছে। তাই সে মনে মনে ভাবলো ভূমিকাকে তার সাথে রাখবে না। তার কাজ সে একাই করবে। কোন এসিস্ট্যান্ড লাগবে না তার। সেদিন মিটিংটা সুন্দরভাবে কম্প্লিট হয়। মিটিং থেকে যখনি আরাভ ফিরে আসে তখন ম্যানেজার বলে দেয় সে তার এসিস্ট্যান্ড চায়না। তার কাজ সে নিজে করবে। কারো হেল্প লাগবে না তার। আরাভ কিছু বলে না। মৃদু হেসে সেখান থেকে চলে আসে। ম্যানেজারের এসিস্ট্যান্ড না থাকলে আরাভ পাগল হয়ে যাবে।


এদিকে জুবাইদা ছেলের সারাদিন অফিসে থাকা নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছে। কালকেও তার বান্ধুবির মেয়ে এসেছিল কিন্তু আরাভের সাথে দেখা করতে পারেনি। আরাভ ওর মা কে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে সে আর কোন মেয়ের সাথে দেখা করবে না। জুবাইদাও কম কিসে। সে তার বান্ধুবির মেয়েকে নিয়ে গেছে একটা কবিরাজের কাছে।সে একটা ডাব পড়ে দিয়েছে। যেটা খেলে আরাভ বিয়ে করতে রাজি হবে। আরাভ বিয়ে করবে, তাদের একটা বউ মা হবে। ছোট ছোট বাচ্চারা পুরো বাড়ি জুরে খেলা করবে। ভাবতেই খুশিতে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছে জুবাইদা। কিন্ত কে জানতো সেই ডাবের পানি খেয়েও আরাভ বিয়েতে মত দিবেনা। আরাভের মায়ের ধারনা কবিরাজ ঠিকি ডাব পড়ে দিয়েছে। কারন তাদের সামনেই তিনি কি যেন বিরবির করে বলে ডাবে ফু্ঁ দিচ্ছিলো। তাহলে কাজ হলো না কেন?? হয়তো ডাবে কোন সমস্যা ছিলো তাই কাজ হলো না। পরের বার তাবিজ নিয়ে আসবে।


একমাস পর,,,,,,,,


রাস্তার পাশে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন যুবক। পরনে হোয়াইট প্যান্ট, আর মিষ্টি কালারের শার্ট। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে দোল খাচ্ছে যুবকটির কেশ। যুবকটি একটু পরপর তার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর সামনে থাকা দুু-তলা বিশিষ্ট এই বাড়ির একটা রুমের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর এই গেট দিয়ে নেমে আসলো এক আসমানি পরি।যার গায়ে ছিলো হোয়াইট কালারের শাড়ি। মাথায় খোলা চুল আর দু-হাত ভর্তি চুড়ি। পরিকে আসতে দেখেই যুবকটি ঞ্জান শুন্য হয়ে পরে। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেই আসমানি পরির দিকে। পরিটা যখন তার সামনে এসে দাঁড়ালো যুবকটির ইচ্ছে করে তাকে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সে যে এটা কিছুতেই করতে পারবে না। বহু কষ্টে নিজকে সামলিয়ে নিল সে।


-এখন অন্ততপক্ষে বলুন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে।


-সেটা গেলেই দেখতে পারবেন।


-এখন বললে প্রবলেম কোথায়?? 


- ইউ উইল লস কনছিউসনেচ। আরাভের কথায় মন খারাপ করলো ভূমিকা। ভূমিকার এমন কালো মুখ দেখে মৃদু হাসলো আরাভ। তারপর বলল,


-গাড়িতে বসুন। ভূমিকা আড় চোখে আরাভের দিকে তাকিয়ে বেংচি কাটলো যেটা আরাভের নজরা এড়ালো না। তারপর গাড়িতে উঠে বসলো। আরাভ স্মিত হাসলে। তারপর সেও গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।


মিনিট দশেক পর গাড়ি এসে থামলো একটা দুতলা ভবনের সামনে। আরাভ আর ভূমিকা দুজনেই গাড়ি থেকে মেনে ভাবনটির সামনে দাঁড়ালো। ভূমিকা তাকিয়ে আছ এই বাড়ির দিকে। কি সুন্দর মনোমুগ্ধকর বাড়ি। পুরো বাড়িটাই সাদারঙ করা। আর তার সামনে দিয়ে নানা ফুলে ভরপুর।


-কি হলো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি? ভেতরে চলুন। আরাবের কথার প্রতিউত্তরে ভূমিকা বলে,


-আমার তো ইচ্ছে করছে এখানেই বাকি জিবনটা কাটিয়ে দেই। 


-আপনি চাইলে সেটাও হবে। মনে মনে বলল আরাভ। তারপর ভূমিকার দিকে তাকিয়ে থেকে ভূমিকার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো। এই প্রথমবার আরাভ ওর হাত ধরেছে যেবার ভূৃমিকা কিছু বলছে না।


বাড়ির ভেতরে এসে ভূমিকা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। অধরে হাসি ফুটিয়ে আরাভের দিকে তাকায় একপলক। আরাব চোখের ইশারায় ওকে সামনে এগিয়ে যেতে বলে। ভূমিকা এতটাই খুশি হয়েছে যে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভুলে গেছে সে। আরাভের পাশে দাঁড়িয়ে সামনে থাকা এই চার ব্যক্তিকে দেখে যাচ্ছে।

#বেলা_শেষে। [১৯]


ড্রয়িংরুমে মুখোমুখি বসে আছে দিগন্ত আর ভূমিকা। দিগন্তের দু-পাশে বসে আছে দিগন্তের বাবা মা। আর ভূমিকার পাশে ভূমিকার বাবা মা। নওশাদ তপু আর আরাভ এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। ভূমিকা তখন দিগন্তের বাবা মা আর ওর বাবা মা-কে দেখে খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেছিলো। পরে যখন এখানে দিগন্ত ও তার বন্ধুরা আসে তখনি বিষন্নতায় ছেয়ে যায় ভূমিকার মন। অজানা এক ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে মায়ের বুকে মাথা গুজে দেয় সে। এতগুলো দিন পর আবার দিগন্তের মুখোমুখি হওয়াটাকে নরমালি নিতে পারে নি সে। পরক্ষনে যখন বুঝতে পারলো দিগন্ত ভালো আছে। ভূমিকাকে নিয়ে দিগন্তের কোন মাথা ব্যথা নেই তখন নিজেকে শক্ত করে স্বাভাবিক করে নেয় ভূমিকা। দিগন্ত মাথা নিচু করে বসে আছে। আর ভূমিকা তাকিয়ে আছে ওর বাবার মুখপানে। এই মানুষটার মুখ দেখলে দুনিয়ার বাকি সব ভূলতে পারে সে। অথচ এই মানুষটার মুখে না আছে কোন হাসি আর না আছে সুখের ছোঁয়া। হয়তো ভূমিকার এই অবস্থার জন্যে তিনি নিজেকে দায়ী করছেন। সেদিন চেয়ারম্যান যখন দিগন্ত আর ভূমিকার বিয়ের কথা বলে তিনি কেন অমত করলেন না। তাহলে তো ভূমিকাকে আজ এত কষ্ট পেতে হতো না। সকলের ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে মাশহুদ বলে উঠলো,


-দিগু, এহনো তোমার কাছে সময় আছে, একটু ভাইবা দেখো। তুমি কি সত্যিই ভূমি মা-কে ডিভোর্স দিবার চাও। 


মাশহুদের কথা শুনে দিগন্ত ভূমিকার দিকে তাকালো। ভূমিকা তখনো তার বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলো। দিগন্তের কেন জানি মনে হচ্ছে এই ডিভোর্স না হলেই ভালো হয়। সে ভূমিকার সাথে সারাজিবন কাটাতে পারবে।এমন একটা মেয়ের সাথে কে না চায় সারাজিবন কাটাতে। পরক্ষনেই মিমির কথা মনে পরে তার। না- না এসব কি ভাবছিস তুই দিগন্ত। তুই তো মিমিকে ভালোবাসিস তাহলে এই স্টুপিড মেয়েটার কথা কেন ভাবছিস। তুই ছাড়া আর কে আছে মিমির। মিমি তোকে খুব ভালোবাসে। নিজের বিবেকের কাছে হেরে যায় দিগন্ত। করুন চোখে ভূমিকার দিকে একপলক তাকিয়ে মাশহুদকে বলে,


-নতুন করে আর কিছু ভাবতে চাইনা আমি, আব্বা।


দিগন্তের কথাশুনে অশ্রুসিক্ত নয়নে ভূমিকা তাকালো ওর দিকে। দিগন্তের সে দিকে খেয়াল নেই। সে তাকিয়ে আছে মাশহুদের দিকে। মাশহুদ শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নেয় সেই অপেক্ষা। ভূমিকা বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে কেও ছুড়ি দিয়ে তার হৃদপিন্ডটাকে ক্ষত বিক্ষত করছে। এই বিয়ের পরিণতি তো আগে থেকেই জানা ছিলো তাহলে কেন এত কষ্ট হচ্ছে ভূমিকার। শেষ পরিণতি জানার পরেও কেন এত বড় ভুল করে ফেলল সে। দিগন্তকে ভালোবেসে ফেলল। ভূমিকা দু-হাতে শক্তকরে শাড়ির আঁচল চেপে ধরলো। ভূমিকাকে এমন অবস্থায় দেখে হাত শক্তমুঠি করে নিলো আরাভ। ভূমিকার এমন ছটফটানি সহ্য করতে পারেনি আরাভ। তাই সে নিঃশব্দে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।


মাশহুদ তার ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে দিগন্তের হাতে দিলো। দিগন্ত কাগজটা ভালো করে পরখ করে নিয়ে ভূমিকার দিকে তাকালো। ভূমিকা তখন চোখ মিটমিট করে অশ্রু লুকানোর চেষ্টা করছে। 


দিগন্ত আর ভূমিকা দুজনেই সেই কাগজটাতে সই করে দেয়। কি অদ্ভুত তাইনা, একদিন দুজনে একই কাগজে একটা করে সই করে একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলো। আর আজও একটা সই করেই সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসলো। অদ্ভুত তাইনা। আসলেই সব অদ্ভুত। 


________________________

কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে পকেটে দু-হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে আরাভ। আরাভের চোখের সামনে এখনো ভূমিকার সেই অস্বস্তিকর চেহারাটা ভেসে উঠছে বারবার। আরাভ যতই ভুলার চেষ্টা করছে সেই মুহূর্তটাকে ততই যেন সেটা ওকে আরো বেশী আঁকড়ে ধরছে। এবার খুব রাগ লাগছে আরাভের। নিজের রাগকে ধমাতে না পেরে গাছের উপর স-জোরে ঘুসি মারলো। এতে তো তার রাগ কমেই নি উল্টো হাতে ব্যথা পেল অনেকটা। হাতের কিছু অংশ ছিঁলে গেছে। যেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আরাভ তার হাতের অবস্থা দেখে হাত ঝাকি দিয়ে নিলো। তারপর দু-চোখ বন্ধকরে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো। এমনি সময় পাশে কারো উপস্থিতি টের পেলো আরাভ। কে এসেছে সেটা দেখার জন্যে পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেল ভূমিকা। ভূমিকার চোখে চোখ পড়তেই চটজলদি আবার পিছনে ফিরে আরাভ। বড় বড় শ্বাস নিয়ে যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাকিক করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে আরাভের কানে আসলো ভূমিকার শান্ত কন্ঠে বলা কথাগুলো।


-আপনি -ই সবাইকে এখানে ডেকেছেন?? প্রতিউত্তরে আরাভ কিছু বলল না।


-কি হলো বলুন, আপনি আমার বাবা মা-কে এখনে ডেকেছেন?? কিছু বলছেন না কেন?? সবাইকে আপনি ডেকেছেন?? আরাভের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ভূমিকা।   


-রিল্যাক্স, এক সাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটার এ্যনসার দিবো। ভূমিকার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে কোমল কন্ঠে বলে উঠলো,


-হ্যাঁ, এটাই সত্যি আমি ওনাদের সবাইকে এখানে ডেকেছি।


-কেন করলেন এটা আপনি?? আর আপনি-ই বা সবটা জানলেন কোথা থেকে?? 


-দিগন্তের থেকে জেনেছি। আরো কোন প্রশ্ন আপনার।


এবার ভূমিকার কথা গেলো আটকিয়ে। সে এখন কি বলবে। অবাধ্য অশ্রুরা এসে ভীড় জমিয়েছে চোখের কোটরে। জড়ানো গলায় বলে উঠলো,


-আপনি এটা না করলেও পারতেন স্যার। এতদিন তো আমার একটা পরিচয় ছিলো।আমাদের সমাজের সকলে এক নামে জানতো আমাকে আমি তালুকদার বাড়ির বউ। আর এখন আমার পরিচয় কি হবে জানেন। আমি একজন ডিভোর্সি মেয়ে। হ্যাঁ, এটাই আমার পরিচয় আমি ডিভোর্সি। আপনাদের শহুরে সমাজ ডিভোর্সি মেয়েদের কোন চোখে দেখে তা আমার জানা নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে ডিভোর্সি মেয়েদের কোন স্থান নেই বললেই চলে। কোন ভালো কাজে আমাদের যেতে নেই। পান থেকে চুন খসলেই শুনতে হয় মানুষের হাজারো কথা। স্বামির ঘর ভাঙা সম্পর্ক ভাঙা মেয়েদের যে কোন সম্মান নেই আমাদের সমাজে। মনে হয় যেন আমরাই সবচেয়ে জঘন্যতম কাজ করেছি। এতটুকুও সম্মান নেই আমাদের। আর আত্নসম্মান ছাড়া বেঁচে থাকার যন্ত্রনাটা আপনারা বুঝবেন কি করে। কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো ভূমিকা।


ভূমিকার প্রতিটা কথা আরাভের বুকে বিষাক্ত তীরের ন্যায় আঘাত করে। সে নিরাধার চোখে তাকিয়ে থাকে ভূমিকার মুখ পানে। কষ্ট হচ্ছে আরাভের ও কষ্ট হচ্ছে খুব। সে তো পারবে না এই কষ্টকে কারো সামনে প্রকাশ করতে। যথাসম্ভব নিজেকে সামলে নেয় সে। তারপর বলে,


-এতদিন তো একটা মিথ্যে সম্পর্কের শিকলে বেড়িয়ে ছিলেন। এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেয়ে আপনি খুশি হয় নি। আপনার নিজেকে স্বাধীন মনে হচ্ছে না। আপনার সমাজ কি বলবে না বলবে এই নিয়ে ভেবে তো নিজের জিবন নষ্ট করার কোন মানে হয় না। হ্যাঁ মানছি, ডিভোর্স জিসিনটা ভালো নয়। কিন্তু, এটা হারামও নয়। হালাল। হ্যাঁ আল্লাহ কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল হচ্ছে, তালাক। প্রতিবেশী, সমাজ, রাষ্ট্র এরা কি বলবো না বললো সেটা ভেবে কেন নিজেকে কষ্ট দিবেন। আমারা মুসলমান, ইসলাম আমাদের ধর্ম। ইসলাম মানে কি জানেন, শান্তি। আর এই ইসলামের পতাকাতলে থেকে আপনি সমাজ ও রাষ্ট্রের ভয়ে নিজের শান্তির কথা ভাববেন না, সে কি হয়। ইসলামের ইতিহাসে আছে, অনেক সাহাবি শুধু মাত্র সওয়াবের নিয়তে এই আশায় থাকতেন কোন বিধবা কিংবা ডিভোর্সি মেয়ে আছে কি না, যাকে বিয়ে করা যায়। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও কিন্তু একাদিক বিধবা ও ডিভোর্সি মেয়ে বিয়ে করেছেন।


নবী ও সাহাবিগন যেখানে বিধবা ও ডিভোর্সি মেয়েদের সম্মান দিয়েছে। তাদের বিয়ে করে নিরাপত্তা ও নিরাপদ জিবন দিয়েছে সেখানে আমাদের সামজে ডিভোর্সি ও বিধবা মেয়েদের মন্দচোখে দেখার প্রবনতা অবশ্যই মন্দ কাজ। পাপের কারন ও বটে।


এতক্ষণ আরাভের কথা ভালো শ্রোতার মতো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো ভূমিকা। আরাভ তো কিছু ভুল বলে নি। যেখানে ইসলাম আমাদের সাম্মান দিয়েছে সেখানে সমাজের ভয় কেন করবো। দু-হাতে চোখের পানি মুছে ভূমিকা। না সে কাঁদবে না। যে মানুষটা তার নয় তার জন্যে কেন সে কষ্ট পাবে।


-আপনি ঠিক-ই বলেছেন স্যার। যেটা হওয়ার গেছে। ফেলে আসা কোন কিছু নিয়ে আমি ভাবতে চাই না। আমার একটা সন্দর ব্রাইট ভবিষৎ আছে। এখন থেকে সেটা নিয়েই ভাববো। ভূমিকার সিদ্ধান্ত কিৎচিত হাসলো আরাভ।


-আংকেল আন্টি চলে গেছেন?? [আরাভ]


-বাবা মা ভিতরেই আছে। আপনিও চলুন না। [ভূমিকা]


আবারও স্মিত হাসলো আরাভ। তারপর বলল, আপনি যান আমি এখানেই ঠিক আছি। হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে চাপ দাঁরির কিয়ৎ অংশ স্লাইড করে নিলো আরাভ। এমন সময় ভূমিকার চোখ আটকে গেলো আরাভের হাতের দিকে। ফর্সা হাতের কিছুটা লাল লাল অংশ। সেখানে রক্ত জমাট বেধে লাল হয়ে আছে। ভূমিকার সাথে কথা বলার ব্যস্ততার হাতে ছিঁলে যাওয়ার যন্তণা ভুলে গেছিলো সে। 


-স্যার, আপনার হাত থেকে তো রক্ত বের হচ্ছে। তড়িৎ গতিতে ছুঁড়ে দেওয়া ভূমিকার প্রশ্নে হাতের দিকে নজর দেয় আরাভ। আর তখন মনে পরে তার হাতে আঘাত দেওয়ার কথা। আরাভ হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। তারপর বলল,


-ঠিক আছে, আপনি যান।


-কোথায় ঠিক আছে। দেখি হাতটা দেখি। বলেই আরাভের হাত নিজের হাতের আবদ্ধে নিলো ভূমিকা।


-কতটা ছিঁলে গেছে। আর আপনি বলছেন ঠিক আছে। খুব জ্বালা করছে না। হ্যাঁ করছেই তো। এভাবে ছিঁলে গেলে অনেক জ্বালা করে। ইশ, এখন আমার কাছে তুলা নেই। আচ্ছা আপনার কাছে টিসু আছে। রক্ত পরিষ্কার করে দিতাম।


আরাভের কানে ভূমিকার কোন কথাই ডুকছে না। সে তাকিয়ে আছে এই ব্যাস্ত ভূমিকার মুখশ্রীর দিকে। তারপর তাকালো ভূমিকার হাতে আবদ্ধ থাকা তার হাতের দিকে।


-কি হলো, টিসু আছে আপনার কাছে??


-হ্যাঁ।


-কই দেন তাহলে?? 


-হ্যাঁ।


আরাভের এই হ্যাঁ হ্যাঁ করাতে বিরক্ত হয় ভূমিকার। এই স্যারটার আবার কি হলো শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ করে যাচ্ছে। উহঃ তুলা থাকলে এখন এই রক্ত পরিষ্কার করে দিতে পারতাম।


-স্যার আপনি একটু ভিতরে আসুন। স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করাতে হবে। আসুন আমার সাথে।


এই মুহূর্তে আরাভের কি হচ্ছে কোন কিছুই বুঝতে পারছে না সে। কোন কথাই বের হচ্ছে না আবাভের কণ্ঠনালির ভেতর থেলে। শুধু মাত্র ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে ভূমিকার দিকে। আরাভের এমন অবুঝের মতো চাহনি দেখে ভূমিকা বেশ বিরক্ত হয়। তাই সে আরাভের মতের অপেক্ষা করে না। আরাভকে টেনে বাড়ির ভেতরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।


#বেলা_শেষে। [২০]


শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে রান্নার কাজ করছে ভূৃমিকা। ভূমিকার বাবা মা সেই কখন আসছে এখনো কিছু খাওয়া হয়নি। তাই বাবা মায়ের জন্যে নিজ হাতে রান্না করছে ভূমিকা। আরাভ অবশ্য বলেছিলো, অনলাইনে অর্ডার করতে।কিন্তু ভূমিকা শুনে নি। অনলাইনে অর্ডার করা খাবার আর নিজ হাতে রান্না করা খাবার এক হলো নাকি। ভূমিকা প্রথমবার কোন আবদার করেছে আরাভের কাছে। তাই সে চব্বিশ বছরের রেকর্ড ভেঙে আজ গিয়েছিল বাজার করতে। বাজার থেকে টাটকা সবজি মাছ মাংস কিনে এনেছে। আর ভূমিকা সেগুলোই রান্না করছে। ঢের মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে সে।


ড্রয়িংরুমে বসে ভূমিকার বাবা মা-এর সাথে গল্প করছে আরাভ। তার মনোযোগ তাদের সাথে গল্প করার থেকে বেশী তার হাতের দিকে। প্রায় ঘন্টা খানেক আগে এই হাত খুব যত্নকরে স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করে তাতে মেডিসিন লাগিয়ে দিয়েছে ভূমিকা। একটু পর পর হাতের দিকে তাকাচ্ছে সে, আর অধরোষ্ঠ চেপে হাসছে। 


পিছনে দু-হাত গুজে পুরো রুম পায়চারী করছে মাশহুদ। তার ভাবতেই অবাক লাগছে তার ছেলেটা এতটা অকৃতজ্ঞ। ছেলের প্রতি এতদিন কি বিশ্বাসটা না ছিলো তার। কত ভরসা করতো তাকে। একটা মেয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল তাকে। সেটাও অবঞ্জা করলো সে। তবে কি তার ছেলেকে চিনে উঠতে পারে নি সে। ছেলের ভবিষ্যৎ এর কথা ভাবতে গিয়ে নিজেদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। মাশহুদের ভাবতেই অবাক লাগছে, যেখানে পুরো একটা ইউনিয়নের মানুষ তার বিচক্ষণতার তাকে সম্মান করে সেখানে নিজের ছেলের জিবনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি সে। তাহলে কি নেতা হওয়ার যোগ্যতা নেই তার। যে নিজের ছেলের জিবনের জন্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে সাধারণ জনগনের বিচার করবে কি করে। নাকি তার ছেলেকে চিনে উঠতে পারে নি সে। সে ছোট থেকে দিগন্তকে দূরে রেখেছে। মাশহুদ যদি তার ছেলেকে নিজের কাছে আগলে রাখতেন তাহলে হয়তো তার ছেলেকে বুঝতেন তিনি। ছেলের পছন্দের কথা জানতেন তিনি। দু-জনের মধ্যে এই দূরত্বই হয়তো সব কিছুর জন্যে দায়ী। ভূমিকার জিবনের কি হবে এখন। এটা ভেবেই অস্থির তিনি। তার একটা ভূল সিদ্ধান্ত ভূমিকার জিবনটা উলট পালট হয়ে গেলো। তারপর মনে পরে যায় মিমি নামক রমনীর কথা। মাশহুদ দিয়ে দিগন্তকে জিগ্যেস করে,


-এই মিমি মাইয়াডা কে?? আমার লগে দেখা করবার কইও তো?? দিগন্ত ওনার পাশেই সুফার মাথা নিচু করে বসে ছিলো। মাশহুদের কথা শুনে মাথা উচু করে সামনে তাকায় সে। অতঃপর বলে,


-মিমি আমার স্ত্রী আব্বা।


-হো জানি, এর লাইগ্যাই তো ভূমিমা-কে ডিভোর্স দিলা।


মাশহুদের কথা শুনে চোখমুখে আমাবস্যা রাতের মতো অন্ধকার নেমে আসলো দিগন্তের। কিছু বলল না। দাত দিয়ে অধর চেপে বড় করে শ্বাস ফেলল দিগন্ত। তখন মাশহুদ আবার বলে উঠলো,


-আমরা আ্যজই গ্রামে চইলা যামু। 


-আজই??


-হো আ্যজকেই চইলা যামু। দিগন্ত ওর মায়ের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালো। মানে আর কয়েকটা দিন থেকে যাও না। দিগন্তের মা চোখের ইশারায় বলল,সেটা আর সম্ভব না। তোমার সাথে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।


-দিগু, দিগন্তের পাশে সুফায় বসতে বসতে বললেন মাশহুদ। তোমার এই বিয়েতে আমার আপত্তি করিনাই ঠিকি কিন্তু আমরা মাইনাও নেই নাই। তুৃমি তোমার এই বউ নিয়া আমার গ্রামে যাইবা না। হো, বিয়া করছো তুমি, সারাজিবন সংসারও করবা তুমি। এতে আমাগো কারোরই আপত্তি থাকার কথা না। কিন্ত গ্রামে আমারে সবাই অনেক সম্মান করে। সমাজে আমার একটা সম্মানিয় জায়গা আছে। আমি চাইনা তোমার কারনে আমার সেই সম্মনটা নষ্ট হোক। মাশহুদের কথা শুনে ছলছল নয়নে তার পানে তাকালো দিগন্ত। তখন ওর মা বলে উঠলো,


-ওগো, এসব তুমি কি কও। আমার একটা মাত্র ছেলে আর আমার কাছে যাইবো না। তুমি তোমার কথা ফিরিয়া নাও।


-আমার সিদ্ধান্তে আমি অনড় গিন্নি।এই সিদ্ধান্ত আমি বদলাইবার পারুম না। তুমি যাও রেডি হইয়া নাও। বলেই সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন মাশহুদ।


গরম গরম খাবার পরিবেশন করছে ভূমিকা। আর ড্রাইনিং এ বসে আছে ভূমিকার বাবা মা সাথে আরাভ। আরাভ চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্ত ভূমিকার বাবা মা তাকে আটকিয়ে রেখেছে। বলছে তারা এক সাথে খাবে। আরাভ ও কোন আপত্তি করে নি। তাছাড়া এটা তো ওরই বাড়ি আর খাবার গুলো ও নিজে কিনে এনেছে তাহলে আরাভের আপত্তি থাকবে কেন? আপনার কিন্ত ভাববেন না ভূমিকার হাতে রান্না করা খাবারের লোভে কোন আপত্তি করে নি। আসলে কিন্তু নয়। প্রথমবার আরাভ কেমন বাজার করলো সেটা দেখার জন্যেই কোন আপত্তি করে নি। খাবার পরিবেশন করা শেষ। ভূমিকা গিয়ে ওর বাবার পাশে বসলো। এখনে যে তাকে তার বাবা খাইয়ে দিবে। যতটা না খুশি লাগছে তার থেকেও বেশী ভয় লাগছে ভূমিকার। মায়ের বকুনি খাওয়ার ভয়। আড় চোখে মায়ের দিকে তাকালো সে। তার মা খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েছে এদিকে তাকানের টাইম নাই তার। ভূমিকার চোখ বড় বড় হয়ে আসলো, এটাই প্রথাম বার হচ্ছে, ভূমিকাকে ওর বাবা খাইয়ে দিচ্ছে আর ওর মা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। 


এক লোকমা ভাত মুখে দিতেই বেশ অবাক হয় আরাভ। খাবারটা মুখের ভিতরে কিছুক্ষণ রেখে তার স্বাধ অনুভব করে নেয় সে। তারপর বিনাশব্দে তৃপ্তির সহিত সব খাবার খেয়ে নেয় আরাভ। খাওয়া শেষে ভূমিকা যখন সব কিছু গুচাচ্ছে তখনি নয়না কল করলো। ভূমিকা কল রিসিভ করে লাউড স্পিকার দিয়ে টেবিলের উপর রাখলো মোবাইল। তখন ওপাশ থেকে নয়না বলে উঠলো,


-ভূমি কোথায় তুই?? আজ অফিসে আসলিনা। জানিস ম্যানেজার কাকা তোকে খুজছিলেন।


স্মিত হাসলো ভূমিকা তারপর বলল,

-আমি না থাকলে ওনার বউয়ের গল্প বলবে কাকে।


-কোথায় তুই?? সন্ধা হয়ে আসছে তো ফিরবি কখন। 


-এইতো ফিরবো আপু। আড় চোখে আরাভের দিকে তাকিয়ে বলল।


-তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস, নিতু বাসায় একা আছে। আমি গ্রামে যাচ্ছি।


-এখন?? 


-হ্যাঁ। বাবা ডেকেছে। শুননা রাখছি। তাড়াতাড়ি ফিরবি কেমন।


-জ্বি আপু।ভূমিকা মোবাইল রেখে সবকিছু গুছিয়ে নেয়।


তারপর থেকেই ভূমিকা জিবনে নেমে আসে দুর্বিষহ। আগে সপ্তাহে অন্তর একবার করে কলেজ যেত এখন সেটাও যাওয়া হয়না কলেজের সকলে জেনে গেছে ভূমিকা তাদের সিনিয়র ভাই দিগন্তের এক্স ওয়াইফ। আর এই কাজটি সম্প্রচারের কাজ করেছে মাহিন নিজে। বিনা বেতন বিনা পারিশ্রমিকে সম্প্রচার করে গেছে সে। ভূমিকার এখন আর কলেজে যাওয়া হয়ে উঠে না। কলেজের কিছু ছেলে আছে যারা তাকে বাজে অফার করে। তোমার মতো একটা সুন্দরীকেও দিগন্ত ভাই ছেরে দিলো। আসলে কি বলতো আমাগো ভাই মিমিকে খুব ভালোবাসে। তাকে ছাড়া অন্যকারো দিকে সে ফিরেও তাকায় না। এমনকি বিয়ে করা বউয়ের দিকেও না। তুমি আমাদের কাছে আসতে পারো। আমরা তোমাকে আদরে সোহাগে ভরে দিবো। কখনো ছেড়ে দিবো না।


ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাধ করতো ভূমিকা। সাদাকে সাদা আর কালো কে কালো বলতে দু-বারও ভাবতো না সে। ছেলেরা যখন ওকে বাজে মন্তব্য করে তখন ইচ্ছে করে তাদের মাটির নিচে পুতে দিতে। অনেকের সাথে লড়াইও করে সে। কিন্তু কয়জনের মুখ বন্ধ রাখবে সে। তাই কলেজে যাওয়াই বন্ধ করে দেয়। সারাদিন অফিসে পরে থাকে আর রাতে নিতুর কাছ থেকে নোট দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যায় 


যান্ত্রিক জীবনে একটা সুন্দর দিন পাওয়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচার মতো। দিনটাকে একটু রঙিন করে নিতে চেষ্টা করেন মাঝে মধ্যেই। তবে ঠিকঠাক হয়ে ওঠাটা অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। তবে কাজের দিনটাকে মধুর করে তুলতে চাইলে দরকার একটা মিষ্টি সকালের। চাপমুক্ত, সতেজ একটা সকাল পেতে কে না চায়। আজকের ফুরফুরে সকাল দেখে মনে হচ্ছে দিনটা খুব ভালো কাটবে। কম্বল সরিয়ে উঠে বসলো ভূমিকা। ছুটির দিন তাই আজ বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে। নিতু হয়তো রান্না করছে। নয়না আপু এখনো তার বাড়ি থেকে ফিরে নি। ভূমিকা বালিশের নিচ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ডুকলো। তখনি নিতু এসে ওর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিলো আর রাগী গলায় বলল,


-কখন থেকে ডাকছি তোকে উঠার কোন নাম নাই। যা রেডি হয়ে নি।


-রেডি হবো। কিন্ত কেন?? 


-আমার বাড়ি যাচ্ছি। 


-তোর বাড়ি তো তুই যা_না আমাকে কেন বলছিস। কম্বল সড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো ভূমিকা। নিতু ভূমিকাকে ধাক্কাদিয়ে ওয়াশরুম পাঠিয়ে দিয়ে বলল,


-তুইও যাচ্ছি আমার সাথে। ভূমিকা কিছু বলবে তখনি নিতু দরজা আটকিয়ে দেয়।


চলবে,,,,,,,,,


#লেখিকা- মাহফুজা আফরিন শিখা।


[বিঃদ্রঃ- পুরো গল্পটা না পড়ে কেও বাজে মন্তব্য করবে না। যে চায়না তার সাথে জোর করে সংসার টিকিয়ে রাখার কোন মানেই হয় না। আচ্ছা বিয়ে কি সব সমস্যার সমাধান। বিয়ে হলেই সব ঠিক হয়ে যায়?? জোড় করে সংসার টিকিয়ে রাখা যায় কি?? উত্তরটা আপনারা দিবেন। আসসালামু আলাইকুম ]

#বেলা_শেষে। [২১]


প্রকৃতিকে জ্যোতির অলংকার পরিয়ে নিঃশব্দ পায়ে সন্ধানামে পৃথীবিতে। প্রবীন দিনকে পিছনে ফেলে অচেনা অনবদ্য রুপে সন্ধারানী এসে হাজির হয়, তবে সন্ধা বড়ই চঞ্চলা। এসেই বিদায় নেয়ার জন্যে প্রস্তুুত হয়ে পড়ে।বড়ই রহস্যময়। কুলায় ফেরা পাখির মতো সন্ধা মানুষকে ফিরিয়ে আনে ঘরে। প্রকৃতির রং বদলাতে থাকে। বিষাদিত গভীর মমতায় গাঢ় ছায়া সন্ধাসাবিদা পশ্চিম গগনে ডুবে যায়। হালকা আধার চারিদিকে ছড়িয়ে পরে দূরের দৃশ্যবলি ক্রমশ অস্পষ্ট হতে হতে এক সময় আধারের সাথে মিলে একাকার হয়ে যায়। বড়ই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।এমনি একটা দৃশ্য দেখেও মন ভালো হচ্ছে না নয়নার। এক ঝাকা গাঁদাফুল গাছের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। ভূমিকা নিতু আর নয়নার ছোট বোন নীলা তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। নয়না কারো কোন কথাই কানে তুলছে না। আর না ওর কান্নার কারনটা বলছে। আজ নয়নার গায়ে হলুদ । কাল ওর বিয়ে। নয়নার বিয়ের কারনেই নিতু ভূমিকাকে নিয়ে ওর গ্রামে আসে। নিতু অনেক আগেই ভূমিকার সম্পর্কে তার বাবা মা-কে বলেছে যার কারনে তারা তাকে খুব বেশী আপন করে নিয়েছে। কিছুক্ষণ পর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। আত্মীয়স্বজন বাড়ি ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। নয়নাকে রেডি করতে হবে অথচ সে এখান থেকে উঠছেই না। বিয়ের সময় মানুষ কাঁদে এটা স্বাভাকিক তবে, সেটা তো বিদায়বেলায় তাহলে নয়না এখনি এত কাঁদছে কেন?


কিছুক্ষণ পর নয়নার মা এসে নয়না কে ডাক দিলো। মায়ের কন্ঠশ্বর কানে আসতেই চোখের পানি মুছে অধরে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। এখন নয়নাকে দেখলে কেওই বলবে না এতক্ষণ এই মেয়েটার চোখে অঝরে বৃষ্টি ঝড়ছিল।বাধ্য মেয়ের মতো মায়ের কথা শুনেই নিজের রুমে চলে যায় নয়না। আর ওর পিছনে যায় ভূমিকা,নিতু আর নিলা। নয়নাকে রেডি করতে।  


দিগন্ত আর মিমি দুজনে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে আজ। এক্কেবারে সামাজিক, ও ইসলামিক নিয়ম মেনে বিয়ে করেছে তারা। মিমিদের বাড়িতেই বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে। মাশহুদ ও তার গিন্নী কেও- ই আসেনি এই বিয়েতে। মিমির বাবা তার নিজ বাড়িতে ঘটা করে অনুষ্ঠান করে দুজনের বিয়ে সম্পন্ন করলেন। দিগন্ত আর মিমিকে নিয়ে মিমির বাড়ির সকলে অনেক খুশি। খুশি হবেই না কেন, এই দিগন্ত আজ বাদে কাল আণবিক সংস্থায় চাকরি করবে। হয়তো একদিন সে অনেক বড় সাইন্টিস হবে। এমন জামাই কে না চায়। বিয়ে শেষে দিগন্ত মিমিকে নিয়ে তার ফ্ল্যাটে ফিরে আসে। নিয়তির কি অদ্ভুত খেলা, একদিন এই ফ্ল্যাটেই সে ভূমিকাকে নিয়ে এসেছিল। তবে সেটা বউ করে নয়। কাগজে কলমে সই করে বউ নামক কাজের মেয়ে করে নিয়ে এসেছিলো সে। আর আজ সেই ফ্ল্যাটে বউ হয়ে এসেছে মিমি। 


ফ্রেশ হয়ে একটা পাতলা সাদা শাড়ি পরে নেয় মিমি। হাতা কাটা ব্লাউজের সাথে সাদা শাড়িতে যে কাওকে অনেক মসৃণ লাগে। এই কোমলতা যে বড্ড বেশী ভয়ংকর। এই মসৃণতা বিবাহিতদের মনে এক নতুন ভালোবাসার আবাহন জানায় । তাদের আমন্ত্রণ জানায় এক অন্য দুনিয়ার। সেখানে ভালোলাগা আর ভালোবসায় একে অপরের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। আর অবিবাহিতদের জন্যে এই ভয়ংকর মসৃণতা ডেকে আনে এক রাশ পাপের সম্রাজ্য।


ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়ার দিয়ে চুল মুছছে মিমি। শাড়ির আঁচলটা তার হালকা করে পেটে গুজে দেওয়া। দিগন্ত এতক্ষণ বারান্দার ছিলো। রুমে আসতেই তার চোখ পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক স্নিগ্ধ রমনীর দিকে। যার কোমল হাতের স্পর্শে মাথার চুলগুলো বারবার কেপে উঠলো। কিছুক্ষণ সেই রমনীর দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্যে চোখ সামনের দিকে ফেরাবে তখন তার চোখ আটকিয়ে যায় মিমির আঁচল গুজে রাখা সেই নিষিদ্ধ স্থানে। মুহূর্তেই দিগন্তের চোখে এক প্রখর নেশা কাজ করে। ধীর পায়ে সে মিমির দিকে এগিয়ে যায়। মিমির কাছাকাছি এসেই সে মিমির উন্মুক্ত পেটে চেপে ধরে। সাথে সাথে মিমির হাত থেকে টাওয়াল নিচে পরে যায়। দিগন্ত আয়নায় থাকা মিমির প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলে,


-কিছু দেখছে পাচ্ছো প্রিয়সি??  


মিমির মুখে ঝেকে বসে একরাশ লজ্জা। সে লজ্জা নিবারণের জন্যে দিগন্তের বুকে মুখ গুজে দেয়। দু-হাতে দিগন্তের ট্রি-শার্ট খামছে ধরে বলে,


-প্রখর নেশা তোমার ওই দু-টি আঁখি জুড়ে। 


-এই নেশা যে তোমাকে নেশাক্ত করতে চায় প্রিয়সী । দিগন্তের কথা শুনে মিমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। হাত পা কাঁপছে তার। দিগন্ত মিমির উত্তরের অপেক্ষা করলো না। সে মিমিকে পাজা কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।


লেপটপের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে রাকিব। কিছুক্ষণ আগে আরাভ তাকে কিছু কাজ দিয়েছে। ম্যানেজারের করা ভুলগুলি ঠিক করতে দিয়েছে তাকে। এতদিন আরাভ নিজেই করতো এসব কাজ। কিন্ত ভূমিকা আসার পর থেকে তো সেই করে যাচ্ছে এই কাজগুলা। আরাভের অভ্যাস চেঞ্জ হয়েগেছে। আরাভ তার চেয়ারে আরাম করে বসে তাকিয়ে আছে রাকিবের দিকে। রাকিবের চোখ তো লেপটপের দিকে কিন্ত ওর হাত আর মুখের রিয়্যাকশন বলছে রাকিব কোন কাজ করছে না। আরাভ কয়েকবার রাকিবকে ডাকলো কিন্ত রাকিব কোন রিসপন্স করলো না। আরাভ এবার সিউর হলো রাকিব কোন কাজ-ই করছে। কোন কিছু দুশ্চিন্তা করতে সে। ছোটবেলার বন্ধু রাকিব। একসাথে স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়েছে। ওরা একে অপরের মুখ দেখলেই সব বুঝতে পারে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। রাকিবের মন খারাপ দেখে আরাভ গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালো তারপর লেপটপ বন্ধকরে দিলো। তাতেও রাকিবের হুস ফিরলো না। আরাভ রাকিবের কাদে হাত রাখলো। তখনি চমকে উঠে রাকিব। আর বলে,


-কে - কে??


-রিল্যাক্স, ভয় কেন পাচ্ছিস। 


-ওহ তুই??


-এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন??এ্যনি প্রবলেম??  


রাকিব তার অধরে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বলল, 

-নাহ, আই এম ফাইন।


-সেটা দেখতেই পাচ্ছি। বল কি হয়েছে। দেখ রাকিব এদম আমাকে মিথ্যে বলার চেষ্টা করবি ন। ডোন্ট টেল মি লাই। আরাভের কথা শুনে রাকিবের চোখ ছলছল করে উঠলো। রাকিব অস্ফুটভাবে বলে উঠলো,


-নয়না, আমার নয়নাকে ফিরিয়ে আনতে পারবি। বল পারবি।


রাকিবের কথা শুনে আরাভ মনে হয় আকাশ থেকে বলল। অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে রাকিবের মুখ পানে। রাকিব আবারও বলে উঠলো,


-আমি নয়নাকে ভালোবাসি, ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবি।


- মিছ নয়না জানে এসব। 


-হুম। আমরা দুজন দুজনকেই ভালোবাসি। 


-তাহলে মন খারাপ করছিস কেন? মিছ নয়না ফিরে আসবে। কয়েকদিনের জন্যেই তো গেছে।  


-আজ নয়নার বিয়ে। ওর বাবা ওকে বিয়ের জন্যে ডেকেছে। রাকিবের কথা শুনে চোখ দুটি ছোটছোট হয়ে এল আরাভের।


-মিছ নয়নার বাড়ির ঠিকানা জানিস তুই?? 


-হ্যাঁ জানি। কেন?? 


-এখন চল। যেতে যেতে কথা বলা যাবে। বলেই অফিস থেকে বেড়িয়ে যায় আরাভ। আর আরাভের পিছন পিছন যায় রাকিব। 


সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে নয়নার কান্নার তীব্রতা যেন বহু গুনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর পক্ষ চলে এসেছে সেই কখন। সবাই নয়নার বর দেখতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হইবে।


নয়না আর তার হবু বরকে পাশাপাশি বসিয়ে রাখা হয়েছে। কাজি সাহেব এখনি তাদের বিয়ের কালেমা পাঠ করবেন। নয়না শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনে থাকা মানুষগুলির দিকে। কেন জানি নয়নার মনে হচ্ছে রাকিব আসবে। তাদের ভালোবাসাটা এভাবে শেষ হতে পারে না। রাকিবকে আসতেই হবে । ঠিক সেটাই হলো। কাজি সাহেব বিয়ে কালেমা পাঠ করার আগেই আরাভ আর রাকিব চলে আসলো। রাকিবকে দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো নয়নার অধরে। সে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে সকলের সামনে রাকিবকে জড়িয়ে ধরলো। রাকিবও তার প্রিয়সীকে শক্তকরে জড়িয়ে নিলো তার বুকে।


ওদের দু-জনকে এমন ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে উপস্থিত সকলে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে এখানে কি হচ্ছে সেটাই বুঝার চেষ্টা করছে সবাই। সকলে ধ্যান ভাঙিয়ে আরাভ বলে উঠলো,


-এই বিয়েটা বন্ধ করুন।

উপস্থিত সকলে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে আরাভের দিকে।আরাভ আবার বলে উঠে, এই বিয়ে হবে না। বন্ধকরুন। ভূমিকা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়ি সবটা দেখছিলো। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না কেন নয়না এত কাঁদছিল?? নয়না রাকিব ভাইয়াকে ভালোবাসে এটা সে আগে কেন বলেনি । ভরা বিয়ের অনুষ্টানে তার বাবা মা-কে এখন অপমানিত হতে হবে। নয়না আপি যথেষ্ট শিক্ষিত মেয়ে। বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন, তাহলে এই ভুলটা সে কি করে করতে পারলো। 


বিয়ের আসরে পর পুরুষকে জড়িয়ে ধরা মেয়েকে সহজে কেও বাড়ির বউ করবে না। নয়নার হবু বরের বাড়ির লেকেরাও সেটাই করলো। তারা বিয়ে ভেঙে চলে গেলো । এই রকম নির্লজ্জ বেহায়া মেয়েকে তারা তাদের বাড়ির বউ কিছুতেই করবে না।  

#বেলা_শেষে। [২২]


বাড়ির উঠোনে মাদুর পেতে বসে আছে ভূমিকা নিতু নিলা ইভান নয়না রাকিব আর আরাভ। উঠোনের পাশে হাসনাহেনা ফুলের সুভাসে মো মো করছে চারিদিক। হাসনাহেনার মন মাতানো সৌরভে আজকের রাতটা আরো বেশী মধুময় হয়ে উঠেছে। মাথার উপরের চাঁদ মামা যেন আজ তার সমস্ত আলো বিলিয়ে দিয়েছে। চাদের জ্যোৎস্নার চারিদিক স্নিগ্ধ লাগছে। শহরের মতো গ্রামে হয়তো আকাশ ছোয়া দালান নেই। নাই রকমের লাইটিং। কিন্ত গ্রামের মতো স্নিগ্ধ সুন্দর পরিবেশ সাধারণত শহরে হয় না। কিছুক্ষণ আগেই নয়না আর রাকিবের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তখন যখন নয়না সকলের সমনে রাকিবকে জড়িয়ে ধরলো। তখনি সকলে নয়নার নামে বাজে মন্তব্য করা শুরু করে দেয়। চারিদিকে সবাই যখন নয়নার নামে হাজারো কথা বলছিল তখন নয়নার বাবা হাতের মুঠি শক্তকরে চেপে ধরে জিহ্বা কামড়িয়ে শুনছিলো। এক পর্যায়ে তার ধর্যের রেখা অতিক্রম করে। আর সে নিজেকে সামলাতে না পেরে নয়নার গালো সজোরে চড় বসায়। টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায় নয়না। রাকিব ওকে উঠাতে চাইকে তার গালেও চড় বসায় নয়নার বাবা। 


-এভাবে অপমান করলি আমাকে। কেন করলি এটা নয়ন। বলেই নয়নার বাবা আবারও নয়নার গালে চড় বসায়। নয়নার মা আটকাতে চাইলে তাকেও মারার জন্যে হাত উঠায় নয়নার বাবা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে মারতে পারে না  


-কি করছো তুমি এটা? এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলছো। মাথাটা কি একেবারেই খারাপ হয়ে গেছে তোমার? নয়নার মায়ের কথা শুনে নয়নার বাবা দিগুণ রেগে গেলে। সে ঝাঁঝালো গলায় বলল,


-আমার মাথা ঠিক আছে। এখনো যে ওকে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়নি। সেটা ওর বাপের ভাগ্য ভালো। জিগ্যেস করো ওকে কেন আমাদের মান সম্মান এভাবে ধূলয় মিশিয়ে দিলো। 


বাবার কথা শুনে ভয়ে কাঁপছে নয়না। তার বাবার রাগের সম্পর্কে সে আগে থেকেই অবগত। এই মেয়েটা কোন দিনও তার বাবার সামনে মাথা উচু করে কথা বলে দেখে নি। ছোট বেলায় একবার নয়নার পা ভেঙে ছিলো। আম গাছ থেকে আম পারতে গিয়ে গাছ থেকে পরে গিয়েছিল। সেদিনও নয়নার বাবা আদর করার পরিবর্তে ওকে মেরেছিলো। নয়নার একটাই অপরাধ সে কেন গাছে উঠলো। নিচের দিকে তাকিয়ে সমান তালে কেপে যাচ্ছে নয়না। তার বাবার কোন কথাই তার কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না। ভূমিকা দূরে দাঁড়িয়ে নয়নাকে দেখে যাচ্ছে। এই নয়না কে বড্ড অচেনা লাগছে তার কাছে। একদিন এই নয়না তাকে সাহস যুগিয়েছিল। দিগন্তর থেকে আলাদা হওয়ার মতো একটা কথাও বলেছিলো সে। অথচ আজ সেই মানুষটা নিজের ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলতে পারছে না । 


নয়নার বাবা মেয়েকে মেরে কিছু কথা শুনিয়ে শান্ত হয়ে চেয়ার বসে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হয়তো কিছু ভাবছেন তিনি। আরাভ এতক্ষণ ওনার রাগ দেখছিলেন। আর নয়নার দিকে তাকাচ্ছিল, হয়তো নয়না কিছু বলবে। না, নয়না সেটা করলো না। সে যে নিচের দিকে তাকাচ্ছে তো তাকাচ্ছে, মাথাতুলে সামনে তাকানোর মত অপরাধ সে কিছুতেই করবে না। হয়তো এটাই পণ করে নিয়েছে সে। রাকিব নয়নার পাশেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর আরাভ দু-হাতে নয়না আর রাকিবের হাত ধরে নয়নার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর রাকিব আর নয়নার সম্পর্কের কথা তাকে বললেন। নয়নার বাবা কোন প্রতিক্রিয়া করলো না। এখনো আগের ন্যায় মাথা নিচু করে বসে রইলো। অতঃপর আরাভ বলল,


-এভাবে চুপ করে থাকবেন না আংকেল। হয় ওদের শাস্তি দেন আর নয়তো ওদের মাফ করে দেন। আরাভের কথা শুনে মাথা তুলে সামনে তাকালো নয়নার বাবা।অতঃপর আরাভ আবারও বলে উঠলো,


-প্লিজ আংকেল, ডোন্ট বি সাইলেন্ট। মানছি ওরা ভুল করেছি। ওরা তো দুজনেই ছেলে মানুষ। আপনি তো বাবা ওদের মাফ করে দিন। আপনার উচিৎ ওদের ভূলগুলো মাফ করে ওদের সঠিক পথ দেখানো। 


-ওরা যে ভুল করছে তার কোন ক্ষমা হয়না। নয়নার বাবার কথায় আশাহত হলো আরাভ। ভেবেছিলো সে ওদের ভালোবাসাকে মেনে নিবে। রাকিব গিয়ে নয়নার বাবার সামনে হাটুগেরে বসে পরলো। তারপর সে হাত জোড় করে তার কাছে মাফ চাইতে লাগলো। আর নয়না আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। কেননা তার সহস নেই বাবার সামনে নিজের ভালোবাসার কথা বলার।


অবেশেষে অনেক বুঝানোর পর নয়নার বাবা ওদের ভালোবাসা মেনে নেয়। ওদের বিয়েও দেয়। শর্ত একটাই। বিয়ের পর নয়না রাকিব কেওই ওনার বাড়িতে থাকতে পারবে না। আরাভ ও কম কিসে। সে সিদ্ধান্ত নেয় যতক্ষণ না নয়নার বাবা ওদের দুজনকে মেনে নিবে ততক্ষণ ওরা এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না। তাইতো উঠোনে মাদুর পেতে বসে আছে। 


চাঁদের স্নিগ্ধ ভূমিকার মুখে পরে ওর মুখটাকে আরো বেশী মায়াবি করে তুলেছে। আরাভ আড় চোখে বারবার ভূমিকাকে দেখছে। ওর মনে হচ্ছে সে এই মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে কাটাতে পারবে কয়েক যুগ। এত মায়া কেন এই চোখ দুটিতে। এই চাহনিতে যে আমি খুন হয়ে যাই বারংবার। সে কি জানে সেই কথা। তার প্রতিটা হাসিতে খুন হই আমি। মুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সে ভূমিকার দিকে।


সবাই চুপচাপ বসে আছে দেখে নীলা বলে উঠলো, সবাই কি এভাবে মুখে আঙ্গুল দিয়া বইসা থাকবা নাকি। আমাদের আসরটাকে একটু জমাও। বর বউ নিয়ে বসে আছি আমরা এভাবে চুপচাপ থাকলে চলে নাকি।


শহরে মানুষ আসর জমানো বলতে তারা একটা বুঝে ড্রিংক করা ওয়াইন, রাম ওয়িস্কি, বিয়ার ছাড়া যেন তাদের আসর জমেই না। তাই রাকিব বলে উঠলো,


-কি দিয়ে আসর জমাবো?? এখানে তো কিছু নেই।


-কি দিয়ে আসর জমাবো মানে। চলুন আমরা ট্রুথ আর ডেয়ার গেম খেলি। তবেই দেখবেন আমাদের আসর জমে উঠছে। নিলার কথায় সম্মতি দেয় সবাই।


গিন্নী ছেলেমেয়েগুলো কি এখনো উঠোনে বসে আছে?? বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে জিগ্যেস করলো নয়নার বাবার। তার কথার প্রতিউত্তরে নয়নার মা বলল, 


-কি আর করবো, তুমি তো ঘরে থাকতে দিলা না। আজ রাগটুকু উঠোনে থেকে, শুনছি কাল নাকি শহরে চইলা যাইবো। আমার মেয়েটাকে এভাবে পর কইরা দিলা তুমি।


-ওগো সবাই রে ঘরে আইয়া শুইতে কও। শহরে থাকে, ডরভয় পাইলো পরে আমাগোই বিপদ অইবো। কথাটা বলেই বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে রইলেন তিনি। তার কথায় নয়নার মা মৃদু হাসলো অতঃপর বলল,


-মানুষটা নিজেকে যতটা কঠিন দেখয়। ভেতরে ঠিক ততটাই নরম। 


চারিদিকে গোল হয়ে বসে আছে সবাই। ওদের মাঝখানে রয়েছে একটা বোতল। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বোতলের দিকে। ইভান বোতলটা ঘুড়িয়ে দিয়ে। সেটা গিয়ে থামলো নিতুর দিকে। নিতু আগেই ট্রুথ নিয়ে বসলো। আর ওকে প্রশ্ন করলো নীলা,


-তোর বয়ফ্রেন্ডের নামটা যেন কি?? ভ্রু নাড়িয়ে জিগ্যেস করলো নীলা।


-এসব প্রশ্ন করার কি মানে? একটু রেগে গিয়ে বলল নিতু।


-নিতু তোর বয়ফ্রেন্ড আছে। অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো নয়না। ওর সাথে তাল মিলিয়ে বলল, ভূমিকা।


-আগে তো কখনো বলিস নি আমাদের।


নিতু আড় চোখে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল, ইভান ই তো বলতে নিষেদ করেছে। আর ওই আমার বয়ফ্রেন্ড।নিতুর কথা শুনে নয়না নীলা আর ভূমিকা বড় বড় চোখ করে তাকালো। ওদের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। ইভার ইভার অন্যদিকে ঘুরে তাকালো। সে এই মুহূর্তে কারো কথা শুনতে নারাজ। 


-কত দিনের রিলেশন তোদের? [নীলা]


-আমার ট্রুথ পালন করা শেষ। তাই দ্বিতীয় কোন প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নয় আমি। ইভান আবারও বোতলটা ঘুড়িয়ে দিলো। এবার বোতল থামলো দিয়ে রাকিবরে দিকে। ভূমিকা আগেই বলে উঠলো, আমি ডেয়ার দিবো।


-কিন্ত আমিতো ডেয়ার চুজ করিনি।


-করতে হবেও না। শুধু আপনার আর নয়না আপুর একটা কাপল ডান্স দেখতে চাই। ভূমিকার কথায় তাল মিলালো নিতু ইভান আর নিলা। রাকিব আড় চোখে আরাভের দিকে তাকালো। সেই চোখের ইশারায় রাকিবকে ডান্স করতে বলল।। রাকিব ইনোসেন্ট মুখ করে বলল ওকে ডান। তারপর নয়নাার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। নয়না লজ্জায় মাখা মুখ নিয়ে রাকিবের হাতে হাত রাখে অতঃপর তারা দুজনে মিলে কাপল ডান্স করে। তৃতীয়বারের মতো বোতল ঘুরে গিয়ে আরাভের দিকে। তখনি রাকিব বলে উঠে আমি প্রশ্ন করবো।  


আরাভ ভেবেছিল সে ডেয়ার নিবে। কিন্ত আগেই রাকিব বলে উঠে সে প্রশ্ন করবে। তাই তাকে ট্রুথই নিতে হলো।


-আজকাল তোর কথা বার্তা চালচলন দেখে মনে হয় তুই কারো প্রেমে পরেছিস। এটা কি সত্যি। আর যেই সুভাগ্যবতির প্রেমে পরেছিস তার সম্পর্কে কিছু বল। আমারও জেনে নেই কেমন আমাদের ভাবি। [রাকিব]


-একজনকে খুব করে ভালোবেসেছি আমি। তার চোখে দিকে যখন তাকাই মনে হয় পুরো পৃথীবিটা কত সুন্দর। কারন তার চোখে আমি আমার পৃথীবি দেখতে পাই। তার হাসি দেখলে আমার মনটা এমনিতেই হেসে উঠে। কারন সব চাওয়ার মধ্যে তার হাসিটাই আমার কাছে প্রধান। তার হাসিতে আমি এক পৃথীবি সমান সুখ খুজে পাই। কথাগুলো বলেই উঠে দাঁড়ালো আরাভ। সবার থেকে কিছুটা দূরে এসে দাঁড়ালো। পকেটে দু-হাত গুজে তাকিয়ে রইলো ও জ্যোৎস্নাময় চাদের দিকে। আরাভের পিছু পিছু রাকিবও এসে দাঁড়ালো ওর পাশে। সে আরাভের কাদে আলতো করে হাত রাখলো। তারপর বলল,


-সেই সৌভাগ্যবতীটা কে যাকে আমার বন্ধু এতটা ভালোবাসে।রাকিবের কথা শ্রবণ করতেই পিছন ফিরে তাকায় আরাভ। ভূমিকার দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে আনমনেই বলে ফেলে,


-আমার মায়াবতী।


আরাভের দৃষ্টি বারবার রাকিব তার দৃষ্টি রাখে। যখনি তার দৃষ্টিতে ভূমিকার মুখ পরে তখনি সে আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,


-এটা তুই কি করছি আরাভ। আগুন জেনেও ঝাপ দিচ্ছিস। কয়লা হয়ে উঠবি। রাকিবের কথা শুনে মৃদু হাসে আরাভ। অতঃপর সে রাকিবের গালে আলতো করে স্পর্শ করে বলে,


-দহন না হলে প্রেমিক হবো কি করে। 


#বেলা_শেষে। [২৩]


-ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ। তাই অনলে পুড়লাম নাকি সুখের সাগরে ভাসলাম সেটা ভেবে কোন কাজ নেই। আমি ভালোবাসি আর ভালোবাসবো শুধু এটাই জানি।


আরাভের কথা শুনে একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো রাকিব। বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে চিবুকে ঘসে আরাভের দিকে তাকিয়ে বলল,


-এখন বুঝতে পারছিস না। যে দিন ভালোবাসার মানুষটাকে হাড়িয়ে ফেলবি সেদিন বুঝবি কত বড় ভুল তুই করেছিস। রাকিবের কথা শুনে মৃদু হাসলো আরাভ। অধরোষ্ঠ চেপে হেসে বলল,


-নয়না অপেক্ষা করছে। রাকিবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উল্টোদিকে ঘুড়ে দাঁড়ালো আরাভ। রাকিব ওকে কিছু বলতে চেয়েও বলল না। ভূমিকার দিকে একপলক তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বলে উঠলো, জানিনা এই পরিণতি কি হবে? তবে কি আরাভের ভালোবাসা হেরে যাবে। এতটা ভালোবাসার পরেও যদি মানুষটা তাকে না বুঝে তাহলে সেই মানুষটা আপন না হোক। ভূমিকা কি কোন দিনও ভালোবাসতে পারবে আরাভকে। যাই হোক আরাভ যেন কষ্ট না পায়। রাকিব তার দৃষ্টি সড়িয়ে আরাভের দিকে দিলো। আরাভ এখনো তাকিয়ে আছে ওই চাঁদের দিকে।


কিছুটা সময় পর আরাভের মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো। এত রাতে কে কল করলো। হয়তো দরকারি ফোন তাই সে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। মোবাইলটা সামনে ধরতেই স্কিনে আম্মু নামটা দেখতে পেলো। আরাভ একবার ভাবলো সে কল রিসিভ করবে না। পরক্ষনে ভাবলা, আজ বাসায় ফিরে নি। আম্মু টেনশন করছে তাকে বলে দেওয়া উচিৎ আমি কোথায় আছি। আরাভ কল রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কাঁদো কাঁদো গলায় আরাভের মা বলে উঠলো, 


-রিহা তিন ঘন্টা বসে থেকে চলে গেল। কোথায় তুই। বাসায় ফিরছিস না কেন? শুন এক সপ্তাহ পর রিহা ইংল্যান্ড চলে যাচ্ছে। তুই তাড়াতাড়ি রিহাকে বিয়ে করে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে আয় । ও একবার চলে গেলে আর ফিরবে না বলে দিয়েছে। 


-আমি এক সপ্তাহ পরেই বাসায় ফিরবো মাই ডিয়ার আম্মু। রিহাকে চলে যেতে দাও। 


-তুই কি কোন দিনও বিয়ে করবি না?? আমি কবে দাদু ডাকটা শুনবো। ছোটছোট নাতি নাতনীদের রুপকথার গল্প শুনাবো। ওদের নিয়ে ঘুরতে যাবো। বল কবে করবো এসব। জুবাইদার কথা শুনে ভূমিকার দিকে তাকালো আরাভ। তারপর আনমনেই বলে উঠলো,


-সে যেদিন চাইবে। 


-কে চাইবে? কার কথা বলছিস তুই আরাভ?? জুবাইদার ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নে আরাভের বোধগম্য হলো সে কে বলেছে। কথা ঘুড়ানোর জন্যে বলল,


-ক-কেও না। আই উইল কল লেটার।বাই। আরাভ কল কেটে দিলো। মোবাইলটা পকেটে পুরে বড় করে শ্বাস নিলো। এ যাত্রায় বেঁচে গেলো সে। জুবাইদা আরাভের পছন্দের কথা জানতে পারলে তাকে পাগল করে দিবে।


দেখেছ ছেলের কান্ড। কথাটা শেষ না করেই কল কেটে দিলো। সুফার এক কোনে মোবাইল রেখে বলল জুবাইদা। আদনান সুফার বসে পায়ের উপর পা তুলে বই পড়ছে আর চা খাচ্ছে। জুবাইদার কথা শুনে বইয়ের পাতার ফাঁকে সে জুবাইদার দিকে তাকালো। জুবাইদার বিরক্তিমাখা মুখ দেখে আদনান বলল,


-তুমি পারোও বটে। কেন ছেলেটাকে এত বিরক্ত করো বলোতো। শোন তোমার ওই বান্ধুবির মেয়ে কি যেন নাম, রিয়া নাকি রিহা, সে যাই হোক তাকে আমার ছেলে কোন দিনও বিয়ে করবো না। ওই মেয়েটার সাথে আমার ছেলের বিয়ে হলে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে। তারপর তোমার ওই বান্ধুবির মেয়েকে সুরাইয়ার মতো একা একা থাকতে হবে। আর বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার মতো অপেক্ষা করতে হবে। আর এদিকে আমার ছেলেটা হাওয়া হয়ে যাবে।


-বই পড়ে পড়ে তোমার মাথাটা এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেছে। বিরক্তির সুরে কথাগুলো বসে চলে গেল জুবাইদা। আদনান তার হাতে থাকা বইতে আবার মনোযোগ দিলো। 


আজ সারারাত উঠোনের কাটিয়ে দেয় সবাই। গল্পকরার এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে যায় নিলা নিতু আর ভূমিকা। আরাভ রাকিব ইভান আর নয়না জেগে থাকে সারারাত। পরের দিন সকলে নয়নার মা এসে ওদের সবাইকে ঘরে নিয়ে যায়। ভূমি নিতুর সাথে ওদের বাসায় চলে যায়। এদিকে আরাভ আর রাকিব ব্যস্ত হয়ে পরে নয়নার বাবার রাগ ভাঙানোর। শেষ পর্যন্ত নয়নার বাবা ওদের মেনে না নিয়ে থাকতে পারে না। 


বিছায়নায় হেলান দিয়ে বসে বই পড়ছিলো মিমি। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে দিগন্ত রুমে প্রবেশ করলো। আর রুমে প্রবেশ করেই সে মিমিকে জড়িয়ে ধরে। মিমিও দিগন্তের পিঠে আলতো হাত বুলায়। 


-আমার চাকরিটা হয়ে গেছে। আমার স্বপ্ন পূরণের আরো একধাপ এগিয়ে গেছি আমি। দিগন্তের চাকরির কথা শুনে মিমির মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠলো। কিন্ত মুহূর্তেই দিগন্তের বলা কথা শুনে মিমির হাসি উবে গেলো,


-কিছুদিনের জন্যে আমাকে দেশের বাহিরে যেতে হবে। কোথায় যাব সেটা জানি না। তবে যেতে হবে। আরো ভালো টেনিং এর জন্যে।


-তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আমি তোমার জন্যে খাবার নিয়ে আসছি। মিমি চলে যায় রান্নাঘরে। দিগন্ত চলে যায় ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ায়। তখন তার চোখের সামনে পরে একটা বন্ধ ঘর। কিছুদিন আগেও এই রুমের দরজাটা সব সময় খুলা থাকতো। তার সামনে কেও একজন বকবক বকবক করতো সারাক্ষণ। এখন আর সেটা কেও করে না। আচ্ছা দিগন্তের চাকরির খবরটা কি ভূমিকাকে জানানো উচিৎ। দিগন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই বন্ধঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কেন তাকিয়ে রইলো সেটাও জানা নেই তার।


অফিসের কিছু ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে ভূমিকা। তিনদিন নিতুদের গ্রামে ছিল সে। এই তিনদিনে ম্যানেজারের করা গোলমাল গুলো ঠিক করতে করতে সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। ম্যানেজার ভূমিকার পাশেই বসা ছিলেন। সে বসে বসে তার বউয়ের হাতের রান্নার প্রশংসা করছে। এখন এগুলো শুনতে শুনতে ভূমিকা অভ্যস্ত তাই কোন প্রতিক্রিয়া করছে না। শুধু একটু পর পর বিরক্তি মুখে ম্যানেজারের দিকে তাকাচ্ছে।


অধরোষ্ঠ চেপে হেসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আরাভ। আরাভ ওর চেয়ারে বসে স্পষ্ট ভূমিকার বিরক্তিমাখা মুখ দেখতে পাচ্ছিলো। কাজের ফাঁকেফাঁকে সে ভূমিকার বিরক্তি মাখা সেই মুখটা উপভোগ করছে। আবারও কাজে মন দেয় আরাভ। রাকিব নেই। কাজেই এখন আরাভের উপর কাজের পেসার বেশী। কিছুক্ষণ পর ভূমিকা আরাভের দরজার টুকা দিয়ে বলল,


-স্যার আসবো??


-কাম-ইন। ভিতরে প্রবেশ করে ভূমিকা। তারাপর আরাভকে কয়েকটা ফাইল দিয়ে বলে,স্যার এগুলো একটু রিচেক করে নিন। দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কি না। ভূমিকার কথামতো আরাভ ফাইলগুলোতে চোখ বুলালো। ততক্ষণাৎ কোন ভূলই তার চোখের সামনে পরলো না।


-গুড, প্লিজ সিট ডাউন। ইশারা করে চেয়ার দেখিয়ে বলল আরাভ। ভূমিকা বসলো না। সেখান থেকে চলে আসার জন্যে কয়েক কদম সামনে এগিয়ে আসে সে। তখনি আরাভ পিছন থেকে ভূমিকাকে ডেকে দাঁড় করায়। তারপর সে ভূমিকার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,


-আপনি কলেজে যাচ্ছেন না কেন?? কলেজে যাওয়ার কথা শুনে ভূমিকা করুন চোখে তাকালো আরাভের দিকে। সে তো চায় কলেজে যেতে, পড়াশুনা করতে কিন্ত কিছু মানুষের বাজে মন্তব্যের জন্যে সে যাচ্ছে না কলেজে। এটা সে কিছুতেই বলতে পারবে না আরাভকে।


-দেখুন, আমি চাইনা আমার কাজের জন্যে আপনার পড়াশুনা উপর কোন ইফেক্ট পরুক। আমি আপনাকে পড়াশুনা করার সুযোগ দিয়েছি।তাহলে কেন যাচ্ছেন না কলেজে। আগামি কাল কলেজে যাবেন আপনি?? 


-সরি স্যার। কথাটা কোন রকমে বলে সেখান থেকে প্রস্থান করে ভূমিকা। ভূমিকা ভয়েজটা কেমন জানি রহস্যজনক মনে হয় আরাভের কাছে।তাই ভূমিকা চলে যেতেই সে কাকে যেন কল করে।


পরেরদিন সকাল সকালে অফিসে এসে উপস্থিত হয় ভূমিকা। যদিও তার কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো প্রবল। এখন আর কারো কথা শুনতে ইচ্ছে করে না। তাই ইচ্ছে থাকলেও কলেজে যাওয়াটা হয়ে উঠবে না। অফিসে এসেই তার কাজে মনোযোগ হয় ভূমিকা। এদিকে আরাভ অফিসে ভূমিকাকে দেখে রেগে আগুন হয়ে যায়। কি অবাধ্য মেয়ে এটা। এক দিন কলেজে যেতে বলেছি তাও যাবে না। আরাভ বড় বড় পা ফেলে ভূমিকার কাছে যায়। আরাভকে দেখে ভূমিকা বলে উঠলো,


-স্যার আপনি এখনে? কিছু লাগবে?? 


-আপনাকে বলেছিলাম আজ কলেজে যেতে তাহলে অফিসে কেন এসেছেন?? 


-কোন জবাব দিলো না ভূমিকা।


-আপনাকে কিছু জিগ্যেস করছি। এ্যনসার মি।


- ভূমিকা করুন চোখে আরাভের দিকে তাকালো। আরাভ ভূমিকার জবাবের অপেক্ষাও করলো না। সে ভূমিকার হাত ধরে টেনে অফিসের বাইরের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। ভূমিকা আরাভের থেকে নিজের হাত ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরাম। স্যার আমার হাতটা ছাড়ুন। আমি এখন কলেজে যাব না। প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন।


-জাস্ট সাট আপ। থমকে দাঁড়িয়ে বলল আরাভ। আরাভের ধমকে কিছুটা কেপে উঠে ভূমিকা। অতঃপর আরাভ বলে,


-এতদিন জানতাম আপনি সব প্রবলেম ফেস টু ফেস সলভ করেন। প্রবলেম থেকে পালিয়ে বেড়ানো আপনাকে ঠিক মানায় না। সমস্যার মোকাবিলা না করলে সেটার সমাধান হবে কি করে। চলুন আমার সাথে।


আরাভ ভূমিকার হাত ধরে টেনে। গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। ভূমিকাও আর কথা বাড়ায় না। সে আরাভের কথামত ওর সাথে চলে আসে। 

#বেলা_শেষে। [২৪]


-আরে এটা দিগন্ত ভাইয়ের এক্স ওয়াইফ না। হাই কিউটি এত দিন কোথায় ছিলে তুমি?? দিগন্ত ভাই ছেড়ে দিয়েছে বলে কি কলেজে আসাও বন্ধ করে দিবে নাকি। আমরা আছি না, আমাদের দিকেও তো নজর দিতে পারো। কথাগুলো বলে অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লো কয়েকটা যুবক।


মাথা নিচু করে একমনে হেটে ক্লাসের দিকেও যাচ্ছিল ভূমিকা। পথিমধ্যে কয়েকটা যুবক ভূমিকাকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলল।যুবকগুলোর কথা শুনে থামকে দাঁড়ায় ভূমিকা। হাতে মুঠি শক্তকরে চেপে ধরে পিছনের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। যুবকগুলোকে কিছু বলবে এমন সময়, সেখান থেকে আরেকটা যুবক বলে উঠে,


-দিগন্ত ভাই তোমাকে পাত্তা দেয়নি তাইনা। ইশ এমন সুইট কিউট বউকে কেও পাত্তা না দিয়ে কি করে থাকতে পারে। ভাইটা সত্যি বোকা। আমাদের কাছে আসবে, আমরা তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো। কখনো ছুড়ে ফেলে দিবো না। আমরা দয়ালু কি-না।


যুবকটা কথা শেষ হতে না হতেই তার গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিলো ভূমিকা। চোখমুখ শক্ত করে বলল,


-কি বললি তুই, আমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবি। ছুড়ে ফেলে দিবি না। তোরা অনেক দয়ালু। শোন ভূমিকা করো দয়া নেয় না। তোদের মতো ছেলেকে ঘৃনা করে ভূমিকা। থুঁথুঁ দেয় তাদের মুখে। তোরা আমাকে দয়া করবি, বলেই আরেকটা চয় বসিয়ে দেয় যুবকটার গালে। গালে হাত রেখে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যুবকটি।আর তার বাকি বন্ধুরা তেড়ে আসছে ভূমিকার দিকে। ভূমিকাও কম কিসে সেও নিজেকে প্রস্তুুত করতে ব্যস্ত হয়ে পরছে এদের সাথে লড়াই করার জন্যে। এমন সময় পিছন থেকে পুরুষনালী কন্ঠ শুনতে পেলে ভূমিকা,


-তোতাপাখিকে ডিস্টার্ব করছিস কেন?? ইটস্ গেট্টিং টু ব্যাড। তোরা যার যার ক্লাসে যা।


পিছনের দিকে ঘুরে তাকায় ভূমিকা। সামনে থাকা ছেলেকে দেখে ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় সে। এ তো সেই ছেলে। যে দিন ভূমিকা সবুজ ড্রেস পরে কলেজে এসেছিলো সেদিন এই ছেলেটা ওকে তোতাপাখি বলে সম্বোধন করেছিল। 


-আপনি এখানে???


-তোরা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস। তোদের চলে যেতে বললাম না। ছেলেটার কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সকলে এক এক করে চলে যায়। সবার চলে যাওয়ার পরেই এখানে উপস্থিত হয় মাহিন। মাহিনকে দেখে ভূমিকা চোখ মুখে রাগ উপচে পড়ছে। হাতের মুঠি শক্তকরে ক্রোধান্বিত হয়ে মাহিনের দিকে তাকায় সে। এই ছেলেটা আবার কোন মতলবে এখানে এসেছে। সেদিনের মার খেয়েও শিক্ষা হয়নি তার। আবার এসেছে। নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভূমিকার মাথায়। কিন্ত ভূমিকার সেই ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে মাহিন বলে উঠলো,


-আই এম সরি ভূমিকা। জানি তোমার সাথে অনেক খারাপ আচরন করছি। ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য আমি, তবুও বলছি যদি পারো আমাকে মাফ করে দিও।


মাহিনের কথা শুনে ভ্রু কুচকিয়ে কপালে কয়েকটা ভাজ ফেলে ভূমিকা। এটা আবার কোন মাহিন। মাহিনের এই রুম সম্পূর্ণ অচেনা তার কাছে।


-কি হলো আমাকে মাফ করবে না ভূমিকা। অপর ছেলেটার কাদে হাত রেখে বলল মাহিন। ছেলেটা মাহিনের দিকে এক পলক তাকিয়ে ভূমিকার দিকে তাকালো। তারপর বলল, 


-মাহিন ভাইকে এবারের মতো মাফ করে দাওনা তোতাপাখি।


-এই মিস্টার পাতি কাক আপনার ভাইকে বলে দিন, নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হওয়ার মতো শাস্তি আর কি হতে পারে। যারা অনুতপ্ত হয় তারাই বুঝতে পারে সে ঠিক কত বড় ভুল করেছে। বলেই সেখান থেকে চলে যায় ভূমিকা। মাহিনের দিকে সে ফিরেও তাকায়নি।


-টোপ তো গিললো না। ছুঁড়ে ফেলে দিলো ভাই। 


-গিলে নি তো কি হয়েছে গিলবে। পৈশাচিক হাসি দিলো মাহিন।


ক্যান্টিনে বসে এতক্ষণ ভূমিকার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো দেখছিল আরাভ। প্রথম যুবকগুলোকে সে স্বাভাকিক ধরে নিলেও মাহিনকে দেখেই মাথায় রক্ত উঠে যায় আরাভের। পানির বোতল এতটা শক্তকরে ধরেছে যে সেটা কচমচ শব্দ করে বলছে,


-আমার উপর কেন রাগ ঝাড়ছিস। যা ওই মাহিনকে ধর। ওকে মার এইভাবে। আমার তো কষ্ট হচ্ছে খুব। আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস। আমি তোর কি ক্ষতি করেছি।


বোতলের কথা কানে তুলল না আরাভ। সে বোতলটাকে সজোরে ছুঁড়ে মারলো। ক্যান্টিনে উপস্থিত সকলে তাকিয়ে আছে আরাভের দিকে। আরাভের এই রাগের সাথে সবার আগে থেকেই পরিচয়। আরাভ যখন এই কলেজে পড়তো কখন কারনে অকারনে রেগে যেত সে।


ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে সোজা গাড়ির কাছে চলে আসে সে। তারপর কাকে যেন কল করে কথা বলতে বলতে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় সে।


রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছে ভূমিকা আর নিতু। এমন সময় কতিপয় যুবক এসে ভূমিকার পা জড়িয়ে বসে পড়লো। ঘটনার আকস্মিক কিছুই বোধগম্য হলো না ভূমিকার। সে নির্বিকায় তাকিয়ে রইলো যুবকগুলোর দিকে। এরা তো সে যুবক যারা সকাল বেলায় ভূমিকাকে বাজে অফার করছিল। এদের এই অবস্থা হলো কি করে। এক্সিডেন্ট হয়েছে কি?? না এক্সিডেন্ট হলে এরা ভূমিকার কাছে কেন ক্ষমা চাইবে। তাহলে এদের আবার হলোটা কি?? 


-এই কি করছেন আপনারা, আমার পা ছারুন। ছাড়ুন বলছি। নিজের পা ছাঁড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল ভূমিকা। 


-আগে আমাগো মাফ করেন আফা। আমার আর কোনদিন আপনারে কোন খারাপ কথা বলবো না। কান্না মিশ্রিত সুরে বলল এক যুবক। 


-শুধু আপনারে কেন? কোন মাইয়ারেই খারাপ কথা বলুৃম না। আপনে আমাগো মাফ কইরা দেন। [অপর একজন]


-আগে আমার পা ছাড়ুন। আর আপনাদের এই অবস্থা হলো কি করে। সকাল বেলায় তো ভালোই তরতাজা টাটকা দেখলাম। এখনি চেহারায় এমন শুটকি শুটকি ভাব কেন? আর আপনাদের সকলের দম কই গেল।


-আপা আপনে আমাগো মারেন কাটেন তাও কিছু বলুম না। আরাভ ভাইয়ের হাত থেকে বাচান আমাগো।


যুবকগুলোর মুখে আরাভের নাম শুনে ভ্রু কুচকালো ভূমিকা। তাদের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে অবাকের সুরে বলল,


-আরাভ স্যার আপনাদের মেরেছে। 


-হুম। ভাই আজ কলেজে এসেছিল এটা না দেখেই আমরা আপনাকে বিরক্ত করেছি। আমাদের মাফ কইরা দেন আপা।


-ঠিক আছে আপনারা আমার পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। অতঃপর ভূমিাকার কথায় ছেলেগুলো ভূমিকার পায়ের কাছ থেকে উঠে দাঁড়ায়। ভূমিকা আবারও বলে,


-আরাভ স্যারের মতো একজন বড় ভাই থাকতে আপনারা পথভ্রষ্ট হন কি ভাবে। স্যারকে তো আপনারা বড় ভাই মানেন। তাই বলছি, স্যারের কাছ থেকে শিখে নিবেন কি ভাবে মেয়েদের সম্মান করতে হয়। আর হ্যাঁ কোন অসহায় মেয়ে দেখলে তাদের সুযোগ না নিয়ে, তাদের দায়িত্ব নিতে শিখুন। তাতে দেশ ও জনগণ সকলেরই মঙ্গল।


কিছুক্ষণ পর একটা রিক্সা আসলো। ভূমিকা আর নিতু দু-জনেই সেই রিক্সায় উঠে বসলো। রিক্সাওয়ালা রিক্সা চালাতে লাগলো। 


-ছেলেগুলো তোকে মন্দ কথা বলেছে তাতে আরাভ স্যারের কি। আরাভ স্যার কেন ওদের মারলো। নিতুর কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো ভূমিকা তারপর বলল,


-আরাভ স্যার তো এমনি। সবার বিপদেআপদে ওনি পাশে এসে দাঁড়ান। মনে নেই তোর নয়না আপুর এক কথায় আমাকে যে চাকরি দেওয়ার কথা। অবলার মতো মাথা নাড়ালো নিতু। মনে হয় সে আরো কিছু বলতে চাচ্ছে। বাট এখন সে বলতে পারছে না।


তারপর দু-দিন কলেজে আসেনি ভূমিকা। সেই দু-দিন অফিসে কাজ করেছে সে। দু-দিন পর যখন কলেজে আসলো ভূমিকা তখন সকলে ভূমিকাকে দেখে মাথা নিচু করে হাটে। কারো বাজে নজর বাজে কথা কোনটারই প্রভাব ফেলে না ভূমিকার উপর। কেও কেও ভূমিকাকে সালাম ও দেয়। দুই-দিনে সকলের এমন পরিবর্তনের কারন জানা নেই ভূমিকার। কেন সকলের মাঝে এমন পরিবর্তন হলো সেটা জানে না ভূমিকা। তবে যা হয়েছে সেরা ভালোই হয়েছে। এবার অন্ততপক্ষে শান্তি মতো কলেজে এসে পড়াশুনা করা যাবে। এতকিছুর মধ্যে মাহিনের কোন পরিবর্তন নেই। সে কাঁঠালেরআঠার মতো ভূমিকার পিছনে লেগে আছে।ভূমিকার সাথে বন্ধুত্ব করার জন্যে। তবে শেষ পর্যন্ত ভূমিকা মাহিনের সাথে বন্ধুত্ব করবে কি?? 

#বেলা_শেষে। [২৫]


ধোয়া উঠা চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্ধকারের চাদর গায়ে মুড়ানো শহরটাকে দেখছে ভূমিকা। দিনের আলোতে শহরটাকে যতটা ব্যাস্ত মনে হয় রাতের আধারে ঠিক ততটাই নিস্তব্ধ। দিনের শেষে ক্লান্তিমাখা শহরটাও ঘুমিয়ে পরে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আকাশ ছোয়া বিল্ডিং গুলো ঝলঝল করছে।চায়ের কাপে অধরোষ্ঠ ছোঁয়ালো ভূমিকা। এমন একটা নিরব মনোরম পরিবেশে আদা লেবুর সংমিলিত চা খাওয়ার মজাই আলাদা। দু-চোখ বন্ধকরে চায়ের স্বাধ উপভোগ করলো ভূমিকা। তার অধরে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। পিছনের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলো নিতু এখনো তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে প্রেমালাপ চালিয়ে যাচ্ছে।নয়না এখন আর তাদের সাথে থাকে না। রাকিবের সাথে রাকিবের বাসাতেই ঠাই হয়েছে তার। মনে মনে একটু বিরক্ত হলো ভূমিকা। এই মেয়েটা এত কথা বলতে পারে। ওই ভালো জানে এত কিসের কথা বলে। একটু পর পর মিছ ইউ লাভ ইউ ছাড়া তো আর কিছুই শুনতে পায়না সে। পাহার সমান মিছ করে তাহলে বিয়ে করে নিলেই পারে। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন মানেই দেখতে পায় না ভূমিকা। যত্তসব নেকামো। 


ভূমিকার চা খাওয়া শেষ হলে সে আরো কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর রুমে এসে শুয়ে পরে।


নিতু বিস্ময়ের দৃষ্টিতে ভূমিকার দিকে তাকায়। রাতের বেলা কোন না খেয়েই ঘুমিয়ে পরবে সে। ইভানকে বলে কল কেটে দেয় সে। ভূমিকাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে বলে,


-না খেয়েই শুয়ে পরছিস। ক্ষিদে পেয়েছে তো উঠ না??


ভূমিকা উঠে বসলো। উত্পাত দৃষ্টিতে নিতুর পানে তাকালো সে। তারপর কড়া গলায় বলল,


-বস্তা বস্তা মিছ খেয়েও পেট ভরে নি তোর বোন। ভাত খাওয়ার কি দরকার। ইভান ভাইয়ের মিছ খেয়েই তো তোর পেট ভয়ে গেছে মনে হচ্ছে।


নিতুর বুঝতে বাকি রইলো না ভূমিকা তার উপর রেগে গেছে। আসলে তার এত সময় কথা বলাটা ঠিক হয়নি। ওই ইভানও না একবার কল ধরলে আর রাখতে চায়না। নিতু ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,


-কি করবো বল। একজন পিউর লাভার তো তাই এমন হচ্ছে। তুই যেদিন কারো প্রেমে পড়বি সেদিন বুঝতে পারবি। নিতুর কথা শুনে চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো ভূমিকার। সত্যিই কি তাই, না তা হবে কেন?? আমি তো দিগন্তকে ভালোবেসেছিলাম, আমার তো মনে হয়নি আমি ওর সাথে কথা বলতে না পারলে থাকতে পারবো না। আমি তো ভালো আছি। দিগন্তকে ভুলে গিয়ে নিজের মতো করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। কই আমার তো কষ্ট হয়না।মাথা নাড়ালো ভূমিকা। এসব কি ভাবছে সে। তারপর অন্যমনস্ক হয়ে বলল,


-সেটা হয়তো কোন দিন সম্ভাব হবে না।


বিছানা ছেড়ে উঠে চলে গেল ভূমিকা। রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে নিতুর সামনে সাজিয়ে রাখলো। তারপর সেই বসে পড়লো। নিতু বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভূমিকার মুখশ্রীর দিকে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এই মুখটা আমাবস্যা রাতের মতো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।


-এভাবে হা করে কি দেখছিস? খাওয়া শুরু কর। এক লোকমা ভাত মুখে পুরে প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল ভূমিকা।


-হ্যাঁ হ্যাঁ খাচ্ছি। নিতু ব্যাস্ত হয়ে পরে খাবার খাওয়ায়। কয়েক লোকমা মুখে দেওয়ার পর নিতু বলে উঠে,


-ভূমি তোর মনে হয়না মাহিন ভালো হয়ে গেছে।


-কুকুরের লেজ কখনো সোজা হতে দেখেছিস? 


-মানে!!!!


-এটা মাহিনের কোন নতুন প্ল্যান। শহরে আসার পর থেকে চিনি ওকে। অনেক সুযোগ দেওয়ার পরেও নিজেকে শুধরাই নি সে। ঠোঁটে চেপে হাসলো ভূমিকা। অতঃপর বলল,আসলে সেদিনের মার কম হয়েছিল কি-না। তাই সে চাইছে আবারও কিছু উত্তম মাধ্যম পেতে। এটা আবার আমি খুব ভালো পারি। অধর প্রসারিত করে হাসলো ভূমিকা। ভূমিকাকে সঙ্গদিয়ে নিতুর হাসলো। এই মাহিনের কপালে দুঃখ আছে।


বিছানায় বসে আছে আরাভ। আরাভের সামনে বসে আজহার মাওদুদ ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। আরাভের হাত কেটেছে সেই কখন। রক্ত শুকিয়ে হাতেই সাথে লেপ্টে আছে। সেই রক্ত স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলেন আজহার। আজহার হাতে ব্যান্ডেজ লাগাতে লাগাতে বললেন,


- হকি খেলতে গিয়ে হাত কেটেছে, এই বয়সে এসে এটাও দেখতে হলো। সত্যি করে বলতো দাদুভাই, হাত কিভাবে কেটেছে। আজহারের কথার কোন জবাব দিলো না আরাভ। তিনি আবারও বলে উঠলেন,


-হকি স্টিকে ব্লেড লাগানো ছিলো মনে হয়।


-ওহ দাদু রিডিকিউল করছো আমার সাথে। নট ফেয়ার।


-দেখো দাদুভাই, আমার মাথার চুলে পাক ধরেছে। এই চুল কিন্ত এমনি এমনি পাক ধরেনি। অভিঙ্ঘতায় পেকেছে মাথার চুল। আরাভের দিকে ঝুকে বসলেন আজহার। আজ কার অপারেশন করেছো দাদুভাই। ভ্রু নাচিয়ে বললেন আজহার। আজহারের কথায় কিছুটা বিব্রত হয় আরাভ। হাত গুটিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। আরাভের মৌনতা দেখে আজহার উঠে ওর কাদে হাত রাখে। বড় করে শ্বাস ফেলে বলে,


-জোড় করবো না তোমাকে দাদুভাই। আমার হেল্প লাগলে অবশ্যই জানাবে ওকে।


-ইউ আর বেষ্ট দাদুভাই। মৃদু হেসে বলে আরাভ। তারপর আজহারের সাথে আলিঙ্গন করে নেয়।


ক্যান্টিনে বসে গল্প করছিলে তিন বন্ধু। এমনি সময় মাহিন এসে ওদের পাশে বসে। মাহিনকে দেখে অটোমেটিক সবার মুখের রিয়্যাকশন বদলে যায়। রাতুল পানি খেতে খেতে বলে,তোদের ক্লাস নেই?? নিতু আর ভূমিকা ওর কথায় সায় দিয়ে বলে, আছে তো। চল ক্লাসে যাই। সবাই চলে যেতে চাইলে মাহিন ভূমিকাকে থামিয়ে বলে,


-তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে??


-আপনার কথা শুনার মতো সময় আমার কাছে নাই।


-তোমার ভালোর জন্যে বলছি। আমার কথাটা শুনো। নাহলে পরে আফসোস করবে। মাহিনের কথা শুনে ভ্রু কুচকালো ভূমিকা। তারপর বলল,


-কি এমন কথা??


মহিন ও উঠে দাঁড়ালো। দু-হাতের তালু ঘসে বলল,


-আরাভের সাথে তোমার কিসের রিলেশন??


-আমি ওনার অফিসের একজন স্টাফ মাত্র।


-ইউ আর রঙ। 


-মানে। কপালে কয়েকটা চিন্তার ভাজ ফেলে বলল ভূমিকা। অতঃপর মাহিন বলল,


-আই থিংক, আরাভ তোমাকে লাভ করে। মাহিনের কথা শুনে চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো ভূমিকার। মাহিনের গালে চড় মারতে চেয়েও মারলো না।শক্ত গলায় বলল,


-নিজের মতো করে সবাইকে কেন ভাবেন বলুন তো। আমার চোখে স্যার একজন আদর্শ মানুষ। আর আপনি এসেছেন তার নামে কুটনিতি করতে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে এক চড় মারি।কিন্ত এই মুহূর্তে আমি আমার হাতটাকে নষ্ট করতে চাচ্ছি না। ভূমিকার কথা মাহিনের গায়ে লাগলো বলে তো আমার মনে হলো না। সে আগের মতোই অধরে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে দাড়িয়ে আছে। রাগে কটমট করে ভূমিকা চলে যাওয়ার জন্যে সামনে পা বাড়াবে এমনি সময় মাহিন পিছন থেকে বলে উঠলো,


-আর যদি আমার কথাটা সত্যি হয় তাহলে বন্ধুত্ব করবে আমার সাথে। 


পিছনের দিকে ঘুরে দাঁড়ায় ভূমিকা। মাহিনের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে দাতে দাত চেপে বলে, আসমান যদি জমিনেও নামে তবুও আপনার সাথে আমার বন্ধুত্ব হবে না। আর আরাভ স্যারে নামে কোন কথা বললে আমি কিন্ত আপনাকে ছেড়ে দিব না। বিকজ স্যারকে আমি যতটা সম্মান করি ঠিক ততটাই শ্রদ্ধা করি। তার নামে কোন বাজে কথা শুনা মানেই তো অপরাধ। মাহিন কে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় ভূমিকা। ভূমিকার চলে যাওয়ার পর অধরোষ্ঠ কামড়িয়ে শয়তানি মার্কা হাসি দেয়। আরাভকে থেকে তো দূরে সারাবোই তোমাকে ভূমিপাখি। নাহলে যে আমার কাজ সহজ হবে না। আমার গায়ে হাত তুলেছে তুমি। সেদিন সময় তোমার হাতে ছিলো। একবার, একবার শুধু সুযোগ পাই।তারপর তোমাকে বুঝাবো মাহিন কি জিনিস। মাহিনের গায়ে হাত উঠানোর ফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে। আমার খাচায় তোমাকে বন্ধি হতেই হবে ভূমিপাখি। শয়তানি মার্কা হাসি দেয় মাহিন। 


কলেজের পিছনের দিকটায় সচরাচর কেও আসেনা ।খুব দরকার না হলে এদিকে কেও আসেই না বললেই চলে। মাঝে মাঝে দু-একজন প্রেমিক প্রেমিকা আসে লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করতে। তাছাড়া এদিকে কারো সমাগম নেই। এমন একটা নিরিবিলি জায়গায় মাহিন অপেক্ষা করছে আরাভের জন্যে। মাহিন নিজে থেকেই আরাভ কে এখানে ডেকেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরাভ এখানে উপস্থিত হয়। 


মূলত আরাভকে এখানে ডাকার কারন হলো ওর কাছ থেকে সত্যিটা জেনে নেওয়া। ভূমিকা আর আরাভের সম্পর্কের সত্যিটা জেনে নেওয়া। আরাভ তো সেটা এমনি এমনি মাহিনকে বলবে না। আর মাহিনও জানে কি করে সত্যিটা আরাভের পেট থেকে বের করতে হবে। তাই সে শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বলে,


-ভাই ভূমিকা মালটা কিন্ত হেব্বি হট। ওকে আমার চাই। এক দিনের জন্যেও হলে ওকে চাই আমার। তুমি আমাকে হেল্প করবে এই কাজে। মহিনের কথা শেষ হতে না হতেই আরাভ ঝাপিয়ে পরলো ওর উপর। মাহিনকে এলোপাথাড়ি মারতে লাগলো সে। তোর সাহস হয় কি করে, ভূমিকার দিকে নজর দেওয়া। আজ চোখ উপরে ফেলবো আমি। মাহিনও কম কিসে সেও মারছে আরাভকে। কেন রে ভূমিকা কি তোমার সম্পত্তি নাকি ওর যে নজর দিলে তুমি চোখ উপরে ফেলবে। আরাভের নাক বরাবার ঘুসি দেয় মাহিন।


-হ্যাঁ ভূমিকা আমার সম্পত্তি। ও শুধু মাত্র আমার। ভালোবাসি ওকে আমি। ওর দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তার চোখ আমি উপরে ফেলবো। আরাভের কথা শেষ হতেই মাহিন এত জোড়ে ওকে ধাক্কা দেয় যে টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পরে যায় আরাভ। মাহিন বিজয়ী হাসি দিয়ে সামনে দিকে তাকায়। মাহিনের দৃষ্টি বরাবর আরাভ ও তাকায়। আর যা দেখে তাতে যেন ওর পুরো দুনিয়া থামকে যায়।


#বেলা_শেষে। [২৬] 


মাহিনের দৃষ্টি অনুসরণ করে আরাভ তার দৃষ্টি রাখতেই দেখতে পেলো ভূমিকা দাঁড়িয়ে আছে। দু-চোখ থেকে অশ্রু পরছে তার। ভূমিকার চোখের পানি দেখে আরাভের মনে হয় পুরো দুনিয়াটাই থমকে গিয়েছে। আরাভের ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে ভূমিকার চোখের পানি মুছে দিতে। কোথায় যেন শুনেছে, ভালোবাসার মানুষের চোখের পানি মাটিতে পরতে দিতে নেই। কিন্তুু এই মুহূর্তে সেটা করতে পারবে না। সেই অধীকার তাকে দেওয়া হয়নি। অস্ফুটভাবে বলল আরাভ,


-ভূমিকা আপনি এখানে???? 


ভূমিকা কিছু বলল না। অশ্রুসিক্ত নয়নে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আরাভের মুখ পানে।তার পর এক পা দু পা করে পিছিয়ে উল্টোদিকে হাটা শুরু করলো ভূমিকা। পিছন থেকে আরাভ ওকে কয়েক বার ডাকলেও পিছনে ফিরে তাকায়নি ভূমিকা। ভূমিকার চলে যাওয়ার মাহিন পৈশাচিক হাসি হাসলো। তার প্ল্যান সাকসেসফুল। আরাভ ক্রোধান্বিত হয়ে মাহিনের দিকে তাকালো। মনে মনে বলল, তোকে আমি পরে দেখছি। তারপর সেও চলল ভূমিকার পিছন পিছন। 


সবাই স্বার্থপর। স্বার্থহীন কেও ভালোবাসে না। কেও কাছেও আসে। স্বার্থের টানে সবাই কি ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকে। আর স্বার্থ শেষ হলেই উপচে পরে মানুষের মুখোশ। আনমনে সামনে হাটছে আর একা একা বকবক করছে ভূমিকা। পিছন থেকে আরাভ ওকে ডাকছে কিন্ত তার কোন ডকাই ভূমিকার কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না। তার ও পিছনে মাহিন শয়তানি মার্কা হাসি অধরে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরাভ বড় বড় পা ফেলে ভূমিকার দিকেই আসছে আর ওকে ডেকে চলেছে। এদিকে দিগন্ত তার স্ত্রী মিমিকে নিয়ে হসপিটাল থেকে ফিরছে।রাস্তার মাঝে ভূমিকাকে এভাবে হাটতে দেখে দুজনেই রিক্সা থেকে নামে ভূমিকার সামনে এসে দাঁড়ায়।


চোখের সামনে প্রাক্তন স্বামি ও তার স্ত্রী কে দেখে থমকে যায় ভূমিকা। অপলক তাকিয়ে থাকে এই নতুন কাপলের দিকে।ততক্ষণে আরাভও এসে ভূমিকার পাশে দাঁড়ায়।


-কি হয়েছে ভূমি? [দিগন্ত]


-আপনি এখানে?? 


-প্রশ্নটা আমি আগে করেছি। [দিগন্ত]


-আপনার প্রশ্নের এ্যনসার দিতে আমি বাধ্য নই। আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়েছেন কেন?? সামনে থেকে সরে দাঁড়ান। ভূমিকার এমন ঝাঁঝালো কথার কর্ণপাত কারলো না দিগন্ত। দিগন্তের কাছে এটা নতুন নয়। ভূমিকা বরাবরই ওর সাথে এমন ভাবে কথা বলেছে।


-কি হয়েছে সেটা তো বলবে?? দিগন্তের কথার প্রতিউত্তরে আরাভ বলে উঠলো,


-আরে দিগন্ত তুমি কোথা থেকে আসলে? 


-মিমিকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিলাম। আসলে কিছুদিন ধরে মিমির শরীরটা খারাপ যাচ্ছে। ক্ষুধামন্দা, বমি মাথা ঘুড়ানো সহ আরো নানা সমস্যায় ভুগছে। তাই ওকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিলাম। 


-ডক্টর কি বলল।


- চিন্তার কোন কারন নেই। রিপোর্ট কাল দিবে বলেছে। দিগন্তের কথা শুনে মৃদু হাসলো ভূমিকা। তারপর মিমি আর দিগন্তের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,


-কনগ্রেচুলেশন মিস্টার এন্ড মিসেস। অধর চেপে হেসে প্রস্থান করলো ভূমিকা। আরাভ ওদের বিদায় জানিয়ে ভূমিকার পিছনে ছুটলো। কি হচ্ছে না হচ্ছে তার কিছুই বুঝতে পারছে না দিগন্ত। সে তাকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে। কিছুদূর আসতেই আরাভ ভূমিকার হাত ধরে টেনে রাস্তার একপাশে দাঁড় করায়।


-ভূমিকা প্লিজ আমার কথাটা শুনুন।


-আপনার কোন কথাই শুনতে চাইনা আমি। হাত ছাড়ুন আমার। আমাকে যেতেদিন নাহলে আমি চিৎকার করবো।


-যত খুশি চিৎকার করো। বাট আই উইল নট লেট গো অফ দিস হ্যান্ড। আমার কথা আপনাকে শুনতেই হবে।


-আর কি বলবেন আপনি? 


-উইল ইউ মেরি মি ভূমিকা। ভূমিকার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় বলল আরাভ। আরাভের কথা শুনে ভূমিকা আরাভকে সজোরে ধাক্কা দেয়। ঘটনাক্রমে আরাভ কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।


-পাগল হয়ে গেছেন আপনি।কি বলছেন আপনি জানেন?


-হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি আমি। তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই তোমার প্রেমে পাগল হয়েগেছি। তোমাকে পাগলের মতোই ভালোবেসেছি আমি। তারপর যখন জানতে পারলাম তুমি দিগন্তের ওয়াইফ। শত চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলে যাওয়ার। কিন্তু পারিনি। তারপর তুমি নিজে থেকেই আমার কাছে ধরা দিলে। আমার অফিসে আমার চোখের সামনে। সর্বক্ষণ তোমাকে দেখায় ব্যস্ত আমার দুটি আখি তার কি নাম দিবে তুমি। পাগলামি এটা। হাত বলে দুহাত বাড়িয়ে তোমাকে আলতে করে ছুয়ে দেই এটাই কি পাগলামি। যদি তাই হয় তাহলে পাগল আমি।তোমার এক বিন্দু ভালোবাসা পাওয়ায় জন্যে পাগল আমি। এই পাগলের পাগলামির জন্যে যে তোমাকে চাই। জানো বড্ড ইচ্ছে করে সবার মতো তোমাকে ভূমি বলে ডাকতে। কিন্তু সেই অধীকারটাও নেই আমার। আই লাভ ইউ ভূমিকা। লাভ ইউ সো মাচ।


-আমি আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না। কথাটা বলেই দু কদম এগিয়ে যায় ভূমিকা। ওমনি খপ করে আরাভ ভূৃমিকার হাত ধরে বলে,


-ভালোবাসতে হবে না। তুমি আমাকে নাই ভালোবাসলে, আমাকে একটা সুযোগ দাও আমি তোমাকে আজিবন ভালোবেসে যাব।

পিচনের দিকে ঘুরে তাকায় ভূমিকা। আরাভের মুখের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আরাব অসহায় মুখ করে ভূমিকার দিকে তাকিয়ে আছে। ভূমিকা ওর দৃষ্টি নামিয়ে হাতের দিকে রাখে। যে হাতটা আরাভ ধরে রেখেছে। হাতের দিকে তাকিয়ে শক্তগলায় বলে, হাত ছাড়ুন।


-আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও। বিয়ে করবে আমাকে??


-সরি স্যার। ভূমিকার জবাব শুনে হাত আলগা হয়ে আসে আরাভের। সে ভূমিকার হাত ছেড়ে দেয়। আর যাই হোক জোড় করে কারো কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ায় যায় না। ভূমিকা চলে যায়। আরাভ তাকিয়ে থাকে হয়তো ভূমিকা এক বার পিছনে ফিরে তাকাবে। কিন্তু ফিছনে ফিরে না ভূমিকা। ভূমিকার চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর। হাতের মুঠি শক্ত করে নেয় আরাভ। চোখ মুখ শক্ত করে কাকে যেন কল করে। কথা বলার পর চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারন করে।


তারপর থেকে কয়েকদিন অফিসে যাওয়া হয়নি ভূমিকার। আর না সে কলেজে গিয়েছে। আরাভ সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকলেও বেলা শেষে সে ঠিকই ভূমিকার বাসায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভূমিকাকে এক পলক দেখার জন্যে সে রাতের অন্ধকারে ভূমিকার বাড়ির পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ভূমিকা যখন বারান্দায় আসতো তখন ওকে দেখে প্রান জুড়াত আরাভের। আজ সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছে ভূমিকা। নিতুর ওর পাশে এসে চুলের বেনুনি করতে করতে বলল,


-অফিসে যাচ্ছিস??


-হুম।


-কেন?? আরাভ ভাইকে না দেখে থাকতে পারছিস না বুঝি।


-রিজাইন লেটার জমা দিতে যাচ্ছি।


-এটা ঠিক করছিস না তুই। দেখ আরাভ ভাই তোকে সত্যিই ভালোবাসে না হলে তোকে দেখার জন্যে রাতের পর রাত আমাদের বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকতো না।


-আমি কি করবো?? 


-কি করবি মানে!!! আরাভ ভাইয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।


-সেটা সম্ভব না। ওনার সাথে আমার কোন দিক দিয়েও যায় না। তাছাড়া আমি একজন ডিভোর্সি মেয়ে। আমাকে বিয়ে করলে ওনার এতদিনের গড়া এক্সিমিশন নষ্ট হয়ে যাবে। আর চাইনা আমার কারনে সমাজে কারো সম্মান নষ্ট হোক। আমি আসছি। ভূমিকা বেড়িয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে।


অফিসে এসে রিজাইন লেটার আরাভের হাতে দিলে সেটা ছিড়ে ফেলে আরাভ। টুকরো কাজগগুলো ফেলে দিয়ে ভূমিকার হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে যেতে থাকে আরাব। ভূমিকা ব্যস্ত ভঙ্গিতে আরাভের থেকে নিজের হাত ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্ত আরাভের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না ভূমিকা। অফিসের বাকি স্টাফগুলো তাকিয়ে আছে আরাভ আর ভূমিকার দিকে। সেদিকে খেয়াল নেই কারোরই। 


ভূমিকাকে নিয়ে আরাভ তার বাড়িতে এসে পৌছায়। আরাভের সাথে ভূমিকাকে দেখতে পেয়ে জুবাইদা যেন হাতে চাদ পেয়েছে। এমন খুশি সে। জুবাইদা ব্যস্ত ভূমিকার আদর আপ্নায়নে। আদনান মাহবুব কলেজে গেছেন। আর আজহারের মওদুদ এতক্ষণ তার রুমে ছিলেন। আরাভের চিৎকার শুনে তার রুম থকে বেড়িয়ে আসে। সবাই যখন ড্রয়িংরুমে বসে পিনপতন নিরবতা অবলম্বন করছে তখন আরাভ আজহারের কাছে গিয়ে বলে,


-দাদু ওকে একটু বুঝিয়ে বলো না ওকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন প্রবলেম নেই। তাহলে ও কেন এত গিল্টি ফিল করছে।


-ওটা ভূমিকা। আজহারের প্রশ্নে আরাভ ভূমিকার দিকে তাকিয়ে কিৎচিত মাথা নাড়িয়ে বলল, হ্যা এটাই ভূমিকা। আজহার ভূমিকার পাশে গিয়ে বসলো। অতঃপর বলতে লাগলো,


-দেখ ভূমিকা তোমার সম্পর্কে আমরা সবাই সবটা জানি। গত পরশু আরাভ আমাদের সবটা বলেছে। আমরা আমার নাতির পছন্দকে সম্মতি জানিয়েছি। আমরা সবাই চাই তুমি আমাদের আরাভের বউ হয়ে এসে। দেখ অতীত তো অন্দকার বেলুনের মতো। তাকে মনে রেখে নিজের জিবনটা কেন নষ্ট করবে তুমি। তোমার সাথে যা হয়েছে তাতে তো তোমার কোন দোষ নেই। তাহলে তুমিই কেন সেক্রিফাইস করবে। তোমার তো একটা ভবিষ্যৎ আছে। আচ্ছা তোমার লাইফ থেকে তোমার কিছু চাওয়া পাওয়া নেই। আরাভ তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায়। তোমাকে সম্মানের সাথে বিয়ে করে তোমার দায়িত্ব নিয়ে ভবিষ্যৎ এর পূর্ন নিরাপাত্তা দিতে চায়। তাহলে তুমি কেন ওকে মেনে নিতে পারছো না।


-আমি কখনো ওই ভাবে ভাবিনি স্যার। ভূমিকার জড়ানো গলায় বলা কথা শুনে আজহার আবার বলে উঠলো,


-ভাবোনি তো কি হয়েছে এবার থেকে ভাববে। দেখ তোমার বয়স ই বা কত?? সারাজিবন তো আর এভাবেই কাটাবে না তুমি। কাওকে না কাওকে তো বিয়ে করতেই হবে তাইনা। আজহারের এই কথা শুনে আরাভের দিকে তাকায় ভূমিকা। আরাভ তখনো ভূমিকার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। ভূমিকার মুখে কখন বলবে সে বিয়ে করতে রাজি। ভূমিকা তার দৃষ্টি নামিয়ে নিচের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ মৌনতা অবলম্বন করে বলে,


-স্যার আমাকে একটু সময় দিন।


-তোমার যতসময় লাগে ভাবতে পারো। বাট সবশেষে এ্যনসারটা যেন হ্যাঁ হয়। আজহারের কথায় মৃদু হাসলো ভূমিকা। তারপর উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার। তখন আজহার আরাভকে বলে,


-ভূমিকাকে তার বাসায় পৌছে দিয়ে এসো দাদুভাই।


-আমি চলে যেতে পারবো। [ভূমিকা] 


-তোমার মতামত জানতে চাইনি। দাদুভাই যাও ভূমিকাকে তার বাসায় পৌছে দিয়ে এসো।


-সে কি কথা। কিছু না খেয়েই চলে যাবে নাকি। আমি ওর জন্যে কতকি রান্না করলাম। ইনোসেন্ট মুখ করে বলল জুবাইদা।


-না না আন্টি আমি কিছু খাবো না।


চলে যায় ভূমিকা। আর ভূমিকাকে এগিয়ে দিয়ে আসে আরাভ। গাড়ির কাছে এসে যখন ভূমিকাকে ডাক দেয় তখন ভূমিকা বলে, প্লিজ স্যার আমি আপনার কোন কথাই শুনতে চাচ্চি না এখন। আরাভও কোন কথা বাড়ায় না। ভূমিকাকে পৌছে দেয় তার বাসায়।


-তারপর, তারপর কি হয়েছিলো, আরাভ আর ভূমিকার বিয়েটা হয়েছিল কি?? পাঁ বছরের ছেলে অভির প্রশ্নে বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে জুবাইদা। তারপর চেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, হ্যাঁ। ওদের বিয়েটা হয়েছিলো।


জুবাইদা কোলে মাথা রেখে ছোট্ট অভি গল্প শুনছিলো এতক্ষণ। এখন সে জুবাইদার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে জুবাইদার মুখোমুখি হয়ে বসলো। তারপর সে জিগ্যেস করলো,


-তাহলে আরাভ আর ভূমিকা এখন কোথায়?? অভির করা প্রশ্নে জুবাইদার চোখ ছলছল করে উঠলো। সে দু-চোখ বন্ধকরে চোখের পানি লুকিয়ে নিলো।


চলবে,,,,,,,


#লেখিকা- মাহফুজা আফরিন শিখা। 


[রিচেক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।]



Post a Comment

Previous Post Next Post